আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই : নাহিদ ইসলাম

‘পাহাড়ে অনেক জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। এসকল জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অনেক ধরনের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি ক্ষেত্রে সকল জাতিগোষ্ঠীই বঞ্চিত। ফলে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই, সম্প্রীতির বিকল্প নেই।’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

Location :

Khagrachhari
আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই : নাহিদ ইসলাম
আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই : নাহিদ ইসলাম |নয়া দিগন্ত

‘আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাই’ উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা নাগরিক পরিচয়ের ভিত্তিতে দেশটাকে গড়তে চাই। জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার সমান। সেই অধিকারের জন্য গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, নতুন বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে।’

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে খাগড়াছড়িতে জুলাই পদযাত্রা শেষে সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

সংগঠনের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় আয়োজিত সমাবেশে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসাইন, দক্ষিণ অঞ্চলের কেন্দ্রীয় সংগঠক অ্যাডভোকেট মনজিলা ঝুমাসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সমাবেশে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, এনসিপি’র জ্যোষ্ঠ সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসুদসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘নতুন দলকে কেউ জায়গা দিতে চায় না। গত ৫৪ বছর ধরে যারা রাজনীতি করছে তাড়া নিজেরাই শুধু রাজনীতি করতে চায়।’

এ সময় তিনি পাহাড়কে নতুনভাবে গড়তে, পাহাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকারের পক্ষে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়ে অনেক জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে। এসকল জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অনেক ধরনের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি ক্ষেত্রে সকল জাতিগোষ্ঠীই বঞ্চিত। ফলে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই, সম্প্রীতির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, জাতীয় নিরাপত্তা সকলকিছু মাথায় রেখে এনসিপি সকল জাতিগোষ্ঠীর ঐক্য, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে এসেছে। আমরা বাংলাদেশকে একটি বহুভাষা ও সংস্কৃতির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে এ ব-দ্বীপ অঞ্চল বগু ভাষা এবং সংস্কৃতির মিলন কেন্দ্র ছিল। আমাদের সংবিধানে এ বৈচিত্রকে অস্বীকার করা হয়েছিল। সকল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি ৭২ এর সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়নি। এখানে জাতির সাথে জাতির বিভেদ, ধর্মের সাথে ধর্মের পার্থক্য, ইসলামের সাথে সেকুলারিজমের সাথে ইসলামের বিভেদসহ নানা রকম বিভেদ জিইয়ে রাখা হয়েছে। ফলে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে নতুন জাতি গঠনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা আমরা হারিয়েছি। কিন্তু ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলে যে নতুন জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে, নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা আমরা আর হারাতে চাই না। বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতেই আমাদের এই পদ যাত্রা।’

দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসাইন বলেন, ‘এনসিপি বিভাজনের নয় সম্প্রীতির এক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরে সকলকে হতে বলা হয়েছিল কিন্তু এই বাংলাদেশে বাঙালি, চাকমা, মারমা সহ বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। বাংলাদেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে নীতি নির্ধারণ করা হবে এটা আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশকে বাংলাদেশ থেকে মুছে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়। বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, হিন্দু, মুসলমান সকলে মিলে বাংলাদেশকে রক্ষা করাই আমাদের কর্তব্য।’

মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নতুন কিছু করতে চাই। নতুন বন্দোবস্তে যাওয়ার জন্য সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে সন্ত্রাস, চাদাবাজ, খুন ও ত্রাসের যে রাজত্ব কায়েম করেছিলে ফ্যাসিস্ট, খুনি হাসিনা সেগুলো সরানোর জন্য দল মত নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, রাজনৈতিক কাঠামোর সংস্কার করতে হবে, পুলিশের সংস্কার করতে হবে, আমলাতান্ত্রের সংস্কার করতে হবে। যদি আমরা সংস্কার করতে না পারি তাহলে যে মানুষগুলো আমাদের জন্য রক্ত দিয়েছিল, রাজপথে শহীদ হয়েছিল আমরা গাদ্দার হিসেবে উপস্থিত হবো। গত ১৫ বছরে আমাদেরকে উন্নয়নের নামে ভেলকি বাজি দেখানো হয়েছিল, ডিজিটালের তকমা দেখানো হয়েছিল কিন্তু এখনো এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।’

দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা- এই শ্লোগানে সোমবার খাগড়াছড়িতে জাতীয় নাগরিক পার্টির(এনসিপি) পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার সকালে চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা খাগড়াছড়ি এসে পৌঁছান।

এর আগে মানিকছড়ির নয়াবাজার থেকে তাদের বরণ করে নিয়ে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে খাগড়াছড়ি নিয়ে আসা হয়। শহরের শান্তি নগর মোড় থেকে পদযাত্রাটি শুরু হয়ে নারিকেলবাগান, খাগড়াছড়ি বাজার হয়ে শহরের শাপলা চত্বর মুক্তমঞ্চে গিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। পযাত্রায় পাহাড়ী বাঙ্গালী ছাত্র জনতাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্টির মানুষ অংশগ্রহণ করেন।