জীবননগরে দেড় মাস নিখোঁজ শারমিন-আজান, খোঁজ চান পরিবার

আজান আগে থেকেই নানা ধরনের সম্পর্কের কারণে সমস্যায় ছিল। পরে আমার স্ত্রীর সাথেও সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর শারমিন আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করে।

আতিয়ার রহমান, জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা)

Location :

Chuadanga
নিখোঁজ আহসান হাবিব আজান ও ফারহানা আক্তার শারমিন
নিখোঁজ আহসান হাবিব আজান ও ফারহানা আক্তার শারমিন |নয়া দিগন্ত

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার শাহপুর গ্রামের ফারহানা আক্তার শারমিন (২৫) ও তার স্বামী আহসান হাবিব আজান দেড় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। জীবিত কিংবা মৃত যে অবস্থায়ই হোক, মেয়ের খোঁজ দাবি করেছেন শারমিনের পরিবার।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক দশক আগে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ঝাঁজরি গ্রামের খোকনের ছেলে সাব্বির হোসেনের সাথে শারমিনের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান, সানজিদা আক্তার ছাপিয়া (৮)। প্রথমদিকে দাম্পত্য জীবন স্বাভাবিক থাকলেও পরে পারিবারিক টানাপোড়েন শুরু হয়।

পরিবারের অভিযোগ, সাব্বিরের পরিচিত মিনহাজ মেম্বারের ছেলে আহসান হাবিব আজানের সাথে শারমিনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর শারমিন সাব্বিরকে তালাক দিয়ে আজানকে বিয়ে করেন। বিয়ের আড়াই মাস পর থেকেই তারা নিখোঁজ।

শারমিনের ভাই মেহেদী হাসান জানান, গত ১ আগস্ট সকালে তিনি মোটরসাইকেলে করে বোনকে ঝিনাইদহে পৌঁছে দেন। শারমিন জানিয়েছিলেন, ওই দিন স্বামী আজানের সাথে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ঘুরতে যাবেন। দুপুর ৩টার দিকে পরিবারের সাথে সর্বশেষ কথা হয় তার। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও আদালতে মামলা করলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে দাবি করেন মেহেদী। তিনি জানান, পুলিশ সিএনজিচালক আরিফকে আটক করেছিল। তাকে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হলেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

শারমিনের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে চাই। সে জীবিত হোক বা লাশ আমি তাকে ফেরত চাই।’ একই দাবি জানিয়েছেন বাবা শাহার আলী।

শারমিনের সাবেক স্বামী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘আজান আগে থেকেই নানা ধরনের সম্পর্কের কারণে সমস্যায় ছিল। পরে আমার স্ত্রীর সাথেও সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর শারমিন আমাকে তালাক দিয়ে তাকে বিয়ে করে। এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ নেই।’

আজানের দুলাভাই স্বপন জানান, আজানের বিষয়ে তাদের কোনো খবর নেই।

তিনি বলেন, ‘শুনেছি সিএনজিচালক আরিফ ধরা পড়েছিল। তবে আজান-শারমিনের ব্যাপারে সেও কোনো তথ্য দেয়নি।’

জীবননগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কৃষ্ণপদ হালদার জানান, নিখোঁজদের কল ডিটেইল রেকর্ড (সিডিআর) এবং মোবাইলের আইএমইআই ট্র্যাক করা হয়েছে। শারমিনের সর্বশেষ লোকেশন পাওয়া গেছে ঝিনাইদহে এবং আজানের কুষ্টিয়ায়। এরপর থেকে সব নম্বর বন্ধ।

তিনি আরো জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর থানায়ও একটি জিডি করা হয়েছিল। তবে ভুক্তভোগীর স্থায়ী ঠিকানা জীবননগরে হওয়ায় সদর থানার জিডি প্রত্যাহার করে জীবননগর থানায় তদন্ত চালানো হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক শরীয়ত উল্লাহ বলেন, সিএনজিচালক আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু মামলা না থাকায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি। তাকে তথ্য দেয়ার জন্য সময় দেয়া হলেও এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ঝিনাইদহ সিআইডির পরিদর্শক মো: ইউছুপের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

নিখোঁজের দেড় মাস অতিক্রম হলেও শারমিন ও আহসান হাবিবের কোনো সন্ধান মেলেনি। শারমিনের পরিবার প্রশাসনের কাছে দ্রুত তাদের খুঁজে বের করে সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে।