জামায়াত সেক্রেটারি

পিআর না থাকায় বিগত নির্বাচনগুলোতে কালো টাকার বাণিজ্য হয়েছে

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে মহানগর ও জেলা আয়োজিত সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার |নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশে পিআর পদ্ধতি চালু না থাকায় বিগত দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে কালো টাকার বাণিজ্য করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে মহানগর ও জেলা আয়োজিত সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিএনপি পিআর মানতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী ১০ বছরের বেশি থাকতে পারবে না এটা বিএনপি মানতে পারে না। পিআর পদ্ধতি চালু হলে কালো টাকা, বেশি শক্তি, কোটি টাকা দিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়।

গোলাম গোলাম পরওয়ারের অভিযোগ, যারা পিআর পদ্ধতি চায় না তারাই কোটি কোটি কালো টাকার মনোনয়ন বাণিজ্য করে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘গাঁয়ের জোরে দেশ শাসন করার দিন শেষ হয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন না করে যদি বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামেতে আবারো নির্বাচন হয় তাহলে আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে, আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বাংলার মানুষ তা হতে দিবে না। জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শাসন চিরতরে বন্ধের লক্ষ্যে এবং জাতীয় সংসদে সকল দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণে, আগামী নির্বাচন পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ আর স্বৈরাচারী শক্তির ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায় না। জুলাই জাতীয় সনদে উল্লিখিত রূপরেখার ভিত্তিতেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবশ্যই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে হতে হবে, যাতে প্রতিটি দলের প্রাপ্ত ভোট অনুযায়ী সংসদে সকল দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এদেশের প্রতিটি নাগরিক চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে সকল দল সমান সুযোগ পাবে, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার অবশ্যই করতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই।’

গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, ‘স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গুম-খুন, গণহত্যা, লুটপাটসহ সব ধরনের দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। সেইসাথে স্বৈরাচারী শক্তির দোসর জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দাবিগুলো এখন দেশের জনগণের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই, কালবিলম্ব না করে, অতিদ্রুত জনগণের দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

রংপুর মহানগর আমির ও রংপুর-৪ আসনের এমপি প্রার্থী উপাধ্যক্ষ মাওলানা এ টি এম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-৩ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা আমির ও রংপুর-৫ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।

মহানগর সেক্রেটারি কে এম আনোয়ারুল হক কাজল, জেলা সেক্রেটারি মাওলানা এনামুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-১ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি ও রংপুর-১ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক রায়হান সিরাজী, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি আল আমিন হাসান, জেলা সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মোস্তাাক আহমেদ, রংপুর-৬ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা নুরুল আমিন, ছাত্রশিবির রংপুর মহানগরী সভাপতি ছাত্রনেতা নুরুল হুদা, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সুজন সরকার, জেলা সভাপতি ফিরোজ মাহমুদ প্রমুখ।

পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ-সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়।