উখিয়ায় ১৮ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা সঙ্কটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায় আছে

‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আমরা অবগত হয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব শিগগিরই একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া হবে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’

হুমায়ুন কবির জুশান, উখিয়া (কক্সবাজার)

Location :

Ukhia
উখিয়ায় ১৮ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা
উখিয়ায় ১৮ নম্বর ক্যাম্প পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা |নয়া দিগন্ত

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা—দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৩টার দিকে তারা গাড়িযোগে উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান।

পরিদর্শনের শুরুতেই উপদেষ্টারা ক্যাম্পে অবস্থিত পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে ওঠেন এবং সেখান থেকে পুরো ক্যাম্প এলাকার সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ত্রাণ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাতে বৈঠক করেন।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান এককভাবে বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব নয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও দায়িত্ব রয়েছে। এতদিন সহায়তা দেয়া হলেও তা এখন কমে আসছে, যা বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করতে পারে। এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের মানবিক দায়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে আমরা বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাস্তবতা জানিয়ে আসছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে আমরা অবগত হয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব শিগগিরই একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া হবে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’

এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাম্পের চারপাশে দেয়া কাঁটাতারের সুরক্ষা বেড়া অনেক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। এটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিভাবে নিরাপত্তা বেড়া মেরামত ও নতুনভাবে স্থাপন করা যায়, তা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতা, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এসব দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নয়, গোটা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আরো সক্রিয় হবে। প্রয়োজন হলে নতুন নিরাপত্তা কাঠামোও গড়ে তোলা হবে।’

এর আগে সকালে উপদেষ্টাদ্বয় কক্সবাজার শহরে অনুষ্ঠিত পৃথক সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সময়ের ব্যবধানে ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে অবনতি হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও উন্নয়ন সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কীভাবে ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, এ বিষয়ে উপদেষ্টাদের এই সফরকে গুরুত্বের সাথে দেখছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

উপদেষ্টাদ্বয়ের এই সফর ভবিষ্যতের একটি সুসংগঠিত ও পরিকল্পিত ক্যাম্প প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপের সূচনা হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও ত্রাণকর্মীরা।