সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারের আলোচিত ব্যবসায়ী নোমান উদ্দিন হত্যা মামলায় একে একে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নিহতের শ্যালক ও মামলার একমাত্র গ্রেফতার আসামি হানিফ উদ্দিন সুমন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) চার দিনের রিমান্ড শেষে সুমনকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট ইবরাহিম সরকার।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মোমেন আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে জানান, হানিফ উদ্দিন সুমন ২০০৯ সাল থেকে তার দুলাভাই নোমান উদ্দিনের বাড়িতে বসবাস করতেন। ২০২৩ সালে বিয়ে করার পরে তিনি স্ত্রীসহ দুলাভাইয়ের সংসারেই বসবাস করতেন। নিহত নোমান উদ্দিন দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিলেন এবং প্রবাসে অবস্থানকালে পরিবারের দায়িত্ব ও আর্থিক লেনদেনের সবকিছুই শ্যালক সুমনের ওপর ন্যস্ত করেন।
আরো জানান, প্রবাসে থাকা অবস্থায় নুমান উদ্দিন নিয়মিতভাবে উপার্জিত অর্থ সুমনের নামে পাঠাতেন। তবে দেশে ফিরে তার পাঠানো টাকার হিসাব চাইলে সুমন কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। এতে তাদের মধ্যে পারিবারিক বিরোধ দেখা দেয়। যা ক্রমে চরম আকার ধারণ করে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ একাধিকবার সালিশ বৈঠক করলেও কোনো সমাধান হয়নি। এছাড়া নিহত নোমান উদ্দিনের বসতবাড়ি নিয়েও নতুন করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। শ্যালক সুমন তার দুলাভাই নুমান উদ্দিনের বসতবাড়িটি নিজের নামে লিখে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এতে তাদের সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়ে ওঠে। এ বিরোধ থেকেই পরিকল্পিতভাবে হত্যার পথ বেছে নেয় সুমন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুমন কয়েকজন সহযোগীকে সাথে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে নুমান উদ্দিনকে হত্যা করে এবং পরে লাশ গুমের উদ্দেশে ধানক্ষেতে ফেলে রাখে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতে সুমন নানা কৌশলে পুলিশের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে পেছনের কারণ এবং সহযোগী কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জানান, দুলাভাই নুমান উদ্দিনের সাথে তার দীর্ঘদিনের শত্রুতা ছিল। প্রায় ২৫ বছরের প্রবাস জীবনে পাঠানো টাকার হিসাব চাওয়াকে কেন্দ্র করেই বিরোধের সূত্রপাত হয়। ওই বিরোধ থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় হত্যার পরিকল্পনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় সুমন তার দুলাভাই নুমান উদ্দিনকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি আরো কয়েকজন সহযোগীর নাম দিয়েছে, যারা বর্তমানে পলাতক। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে পুনরায় রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করা হবে।
এদিকে স্থানীয় এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও পলাতক সহযোগীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।



