বোয়ালমারী (ফরিদপুর) সংবাদদাতা
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় পেঁয়াজ চাষ বহু দশকের ঐতিহ্য। এ অঞ্চলের উর্বর দোআঁশ মাটি, অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষকদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা পেঁয়াজকে এখানে লাভজনক ফসলে পরিণত করেছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রায় প্রতিটি মৌসুমে বোয়ালমারীর রূপাপাত, দাদপুর, গুনবহা, চতুলসহ সব ইউনিয়নের বহু জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয় এবং জেলার বাজারে বিপণনেও বোয়ালমারীর পেঁয়াজের সুনাম দীর্ঘদিনের।
এ বছরের মৌসুম শেষের দিকে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় এলাকাজুড়ে চাষিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উচ্ছ্বাস। কয়েক মাস আগেও যেখানে প্রতিকেজি পেঁয়াজ কম দামে বিক্রি করে কৃষকরা হতাশ ছিলেন, মৌসুমের শেষভাগে সেই দাম বেশ কয়েক দফা বৃদ্ধি পেয়ে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে। পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বাড়তি দাম পাওয়ায় অনেকেই বলেন, বছরের পর বছরের পরিশ্রম যেন এবার ফল দিয়েছে।
নতুন মৌসুমের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে মাঠে। চাষিরা জমি নরম করার পাশাপাশি আগাম জাতের বীজ সংগ্রহ, সার ব্যবস্থাপনা, সেচ সুবিধা এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। অনেকেই গতবারের তুলনায় বেশি জমিতে আবাদ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, কারণ, বাজারের ইতিবাচক সাড়া তাদের আরো উৎসাহিত করছে।
রূপাপাত ইউনিয়নের কৃষক দেলোয়ার শেখ বলেন, মৌসুমের শেষে এমন দাম পাওয়ার কারণে এ বছর আমরা আরো বড় পরিসরে পেঁয়াজ লাগাতে চাই। গতবার ক্ষতির ভয় ছিল, এখন মনে হচ্ছে ভালো কিছু হবে।
দাদপুর ইউনিয়নের কৃষক মোতালেব মিয়া জানান, বীজ ও শ্রমিকের খরচ আগের চেয়ে বেশি, কিন্তু শেষের দিকে যে দামে বিক্রি করেছি, তা আমাদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছে।
গুনবহা ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, নতুন মৌসুমে উন্নত বীজ ব্যবহার এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ভালো ফলনের চেষ্টা করছি। দাম যেমন বেড়েছে, আমরা আশা করছি এবার লাভ আরও বাড়বে।
বোয়ালমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলভীর রহমান বলেন, পেঁয়াজ চাষে বোয়ালমারী একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। কৃষকদের উৎসাহ দিতে আমরা ইতোমধ্যে বীজ ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিচ্ছি। আগাম জাত, সঠিক সার প্রয়োগ ও রোগ দমন ব্যবস্থাপনায় কৃষি বিভাগের বিশেষ দিকনির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। দাম বাড়ায় চাষিরা নতুন মৌসুমে আরো আগ্রহী হয়েছেন, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
কৃষকদের মুখে স্বস্তি, জমিতে নতুন উদ্যম, সব মিলিয়ে বোয়ালমারীতে এবার পেঁয়াজ মৌসুম নিয়ে আশাবাদ আরো বেড়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও লাভজনক বাজারদর থাকলে এই অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষ আবারো অর্থনৈতিক সাফল্যের ধারায় ফিরে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



