মেহেরপুরের গাংনীতে কালের বিবর্তনে সামন্ত প্রভুদের খাজনা আদায়ের লাঠিয়ালদের নিষ্ঠুরতা এখন মানুষের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। লাঠিয়ালদের কলাকৌশলও বেশ নজরকাড়া। প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে নানা কৌশলে লাঠি চালাচ্ছেন একপক্ষ। অন্যপক্ষও আত্মরক্ষার্থে অবলম্বন করছেন নানা কৌশল। এ যেন আনন্দদায়ী পাতানো এক যুদ্ধ! হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এ ঐতিহ্যবাহি পাতানো যুদ্ধে মুগ্ধ হয়েছেন গাংনীর হাজার দর্শক।
খেলার শুরুতেই বাদ্যের তালে তালে লাঠিয়ালদের নাচ, আক্রমণ ও প্রতিরক্ষামূলক কসরত যেন দর্শকদের বিমোহিত করেছে। লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে এক লোকজ উৎসবের আমেজ।
খেলার আয়োজকরা বলেছেন, ঐতিহ্যবাহি লাঠিখেলাকে পুনরুদ্ধার করে সামাজিক ও সাংস্কৃতিকবন্ধনকে সুদৃঢ় করে সুস্থ ধারার সামাজিক বিনোদন প্রদান, মাদক ও জুয়ামুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে এ খেলার আয়োজন করা হয়েছে।
গাংনী বাজারপাড়া উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘জনপ্রিয় এ খেলাটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও মোবাইল আসক্ত থেকে মুক্ত রেখে শরীর চর্চায় আগ্রহী করতে খেলাটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’
স্কুল ছাত্রী রোমানা খাতুন বলেন, ‘আমি কখনো লাঠি খেলা দেখিনি। আজকে এ খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এ খেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। লাঠিখেলা চর্চা করলে আত্মরক্ষায় ভালো কাজ দিতে পারে।’
চাঁন্দামারী গ্রামের দর্শক আয়ূব হোসেন বলেন, ‘ছোটবেলায় দলবেঁধে লাঠিখেলা দেখতে যেতাম। এখনকার তরুণরা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এ খেলা সামাজিকতা ও সংস্কৃতির বন্ধনকে ফিরিয়ে আনে।’
শিশিরপপাড়া লাঠিয়াল দলের টিম লিডার আনিছুর রহমান বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ খেলায় যেমন দর্শকরা আনন্দ পায় তেমনি এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার নানা দিক তুলে ধরা হয়। এ থেকে নিজের আত্মরক্ষাও শেখা যায়।’
আয়োজক কমিটির উপদেষ্টা মকবুল হোসেন মেঘলা বলেন, ‘যুব সমাজকে মাদক ও জুয়ামুক্ত রাখতে এবং সংস্কৃতির বন্ধনকে সুদৃঢ় করতেই এ আয়োজন।’
জুয়া, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নতুন প্রজন্ম গড়তে এ ধরনের খেলা টিকিয়ে রাখার দরকার বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য এটি বিনোদন হলেও এক সময় লাঠিখেলাটি ছিল আত্মরক্ষার রণকৌশল। আগে জেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত একটি লাঠিয়াল দল ছিল। সময়ের সাথে সাথে এ খেলাটি আজ প্রায় বিলুপ্ত হয়েছে। এমন আয়োজন ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
খেলাটির উদ্বোধন করেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন। গাংনী বাজারপাড়া সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি রেজাউল হক, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল, গাংনী উপজেলা বিএনপির সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দাল হক, মেহেরপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলী। খেলা শেষে বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের মাঝে প্রধান অতিথি পুরস্কার বিতরণ করেন।



