বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মিঞা নূরুল হক বলেছেন, ‘মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা এখন আর অবহেলিত থাকবে না। আধুনিক যুগের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাদরাসা শিক্ষাকে নতুন কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গিতে এগিয়ে নেয়া হবে।’
শনিবার (১৫ নভেম্বর) স্থানীয় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মানিকগঞ্জ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বর্ণাঢ্য পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি মাদরাসার মূল ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়। এসময় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অতিথিরা পুনর্মিলনী স্মারক উন্মোচন করেন।
প্রফেসর মিঞা নূরুল হক বলেন, ‘মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা প্রমাণ করেছে তারা কারো চেয়ে কম মেধাবী নয়। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব জায়গায় মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। আগামীর আর্দশ ও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে মাদরাসার ছাত্ররাই নেতৃত্ব দেবে ইনশাআল্লাহ।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজকের শিক্ষার্থীদের শুধু ধর্মীয় জ্ঞানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি, মানবিকতা ও নেতৃত্বগুণের বিকাশ ঘটিয়ে তাদেরকে আধুনিক শিক্ষার মূলধারায় এগিয়ে নিতে হবে। সরকার ইতোমধ্যে মাদরাসা শিক্ষাকে সমান গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।’
পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক সরকার মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল প্রফেসর মো: ওবায়দুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্মতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু সায়েম, ইবনে সিনা হাসপাতালের ডিজিএম মুহাম্মদ জাহিদুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন।
প্রফেসর ওবায়দুল হক বলেন, ‘মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিজেদের অর্জিত দ্বীনি শিক্ষা দ্বারা দেশের কল্যাণ সাধন করতে হবে। মহান আল্লাহর দ্বীনকে তার জমিনে কায়েম করতে হবে। আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই কেবল দ্বীনি শিক্ষার প্রকৃত অবদান রাখা সম্ভব হবে।’
মুহাম্মদ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যাদের অন্তরের মধ্যে ওহির শিক্ষা আছে তাদের দায়িত্ব পুরো জাতিকে ওহির দাওয়াত পৌঁছে দেয়া। মানুষের কল্যাণে ওহির নির্দেশ অনুযায়ী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কেউ যদি দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেকে দূরে থাকি, তাহলে আমাদের মনে রাখতে হবে এ বিষয়ে আল্লাহর নিকট অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।‘
মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্ত ইলম দ্বারা দেশ ও জাতির খেদমত করতে হবে। যাদের মধ্যে খোদাভীতি আছে তারা কখনো অপরাধ করতে পারে না এবং কোনো অপরাধীকে সহযোগিতা করতে পারে না। আমাদের অনেক দায়িত্ব আছে, সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে মিথ্যা, ধোঁকাবাজি ও অপরাধ হতে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর এজন্যে প্রয়োজন একটি ইসলামী সমাজ। আমাদের অবশ্যই ইসলাম ও বাংলাদেশকে বিজয়ী করতে হবে।’
নূর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন মানিকগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আতিকুর রহমান, হাফেজ মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা সালাহউদ্দিন, মাওলানা সামসুদ্দিন ও প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল মান্নান।
এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: শাহানুর ইসলাম, এনপিআই’র প্রিন্সিপাল ড. মুহাম্মদ ফারুক হোসেন, এবি পার্টির মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জনি প্রমুখ।
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সম্মাননা প্রদান।



