ঘূর্ণিঝড় শক্তি ও অমাবস্যার জোর প্রভাবে গত তিন দিনে হওয়া অতিবর্ষণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বরগুনার আমতলীতে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি, মাছের ঘের, পানের বরজ, আউশ ধানের বীজতলাসহ কৃষিজমি। এছাড়া আমতলী-পুরাঘাটা ফেরিঘাট গ্যাংওয়ে তলিয়ে গিয়ে ৩ ঘণ্টা বন্ধ ছিল পায়রা নদীর ফেরি চলাচল। সবমিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উপজেলার জন-জীবন।
জানা যায়, গত তিন দিনে আমতলীতে ১১৯.৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতি মাত্রার বৃষ্টিতে পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্র পানিতে থৈ থৈ করছে।
এদিকে পৌরশহরে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এমন চরম জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পৌরবাসীরা। ঘর-বাড়ি পানি ঢুকে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে শিকার হয়েছেন তারা।
এছাড়া বৃহস্পতিবার (২৯ মে) পায়না নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পায়রা নদীর আমতলী-পুরাঘাটা ফেরিঘাট গ্যাংওয়ে তলিয়ে যায়। ফলে ৩ ঘণ্টা পায়রা নদীর ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান ইজারাদার সিদ্দিকুর রহমান।
এদিকে উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের অধিকাংশ মাছের ঘের ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরের বিভিন্ন এলাকার পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান চাষিরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধতায় আমতলী পৌর শহরের বিভিন্ন রোড-ঘাট, আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মফিজ উদ্দিন বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আমতলী সরকারি কলেজ, বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আমতলী বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খোন্তাকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের শিবলী শরীফ বলেন, ‘পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। আউশ ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন না হলে বীজতলা পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুকুরপাড়ে জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করছে অনেকে।’
জলকপাট দিয়ে পানি তেমন নিষ্কাশন না হওয়ায় এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা।
আমতলী মফিজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ আলম কবির বলেন, ‘বিদ্যালয় মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের কোয়ার্টার তলিয়ে ঘরের মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। পৌর শহরে চরম জলাবদ্ধতায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করার দাবি জানাই।’
আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোছা: ফেরদৌসি আক্তার বলেন, ‘পানি কলেজ ভবনের বারান্দা গড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে ক্লাসে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।’
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার রাসেল মিয়া বলেন, ‘আউশ ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেলেও যদি পানি দ্রুত নেমে যায় তাহলে ততটা ক্ষতি হবে না। তবে সবজির ক্ষেতে কিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পৌর প্রশাসক মো: রোকনুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘আমি পৌর শহরের পানিতে তলিয়ে যাওয়া এলাকা ঘুরে দেখেছি। তাতে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে দ্রুত যেন পানি নিষ্কাশন হয় সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’