জি এম কাদের

বর্তমান সরকারও আ’লীগের মতো প্যারালাল জাপাকে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে

‘বর্তমান সরকারও আওয়ামী লীগের মতো প্যারালাল জাতীয় পার্টি করে তাদেরকে লাঙ্গল দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে বলে শুনতে পারছি।’

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
বক্তব্য দিচ্ছেন জি এম কাদের
বক্তব্য দিচ্ছেন জি এম কাদের |নয়া দিগন্ত

জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে নানাভাবে জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি প্যারালাল দল তৈরি করে আমাদেরকে আওয়ামী লীগ জিম্মি করে রেখেছিল। বর্তমান সরকারও আওয়ামী লীগের মতো প্যারালাল জাতীয় পার্টি করে তাদেরকে লাঙ্গল দিয়ে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করছে বলে শুনতে পারছি।’

সোমবার (১৪ জুলাই) রংপুরের পল্লীনিবাসে মরহুম প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগর সভাপতি সাবেক সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলটির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক লোকমান হোসেন, হাসানুজ্জামান নাজিম।

বিগত সরকার জাতীয় পার্টিকে ব্লাকমেইলিং করেছে উল্লেখ করে জিএম কাদের বলেন, ‘বিগম সরকার নানানভাবে আমাদের দলের একটি প্যারালাল দল তৈরি করে তাদের মাধ্যমে আমাদের সবসময় ব্লাকমেইল করতে। সে কারণে অনেক সময় তাদের কথা মতো আমাদের চলতে হয়েছে।’

সুবিধাবাদী পক্ষটিকে দিয়ে বর্তমান সরকারও জাতীয় পার্টিকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৪-এর পরে সুযোগ এলো। যখন এই সুবিধাভোগী পক্ষটি দেখল, আমি আবারো এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। তখন তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করল। তারা বলল, সরকারবিরোধ কথা বললে আমরা আপনার সাথে রাজনীতি করতে পারব না, কী করবেন। আমরা আলাদা করব দল। নতুন করে কাউন্সিল করব। সেই কাউন্সিলে আপনাকে বাদ দেবো। পরবর্তীকালে তারাই বললেন, সরকারের সাথে নাকি আঁতাত হয়েছে। কী আতাত। সরকার চাচ্ছে, জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে আসতে হবে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে সমস্যা নেই, কিন্তু জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে সেটা দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদের থাকলে তার নেতৃত্বে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তা আছে। তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে তখন আমরা হুমকির মুখে পড়তে পারি।’

জি এম কাদের বলেন, ‘সরকার নাকি তাদেরকে বলেছে, তোমরা জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে আলাদা একটা দল করো। তোমাদেরকে আমরা লাঙ্গল দিয়ে দেবো। তোমরা লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবে। কিন্তু জি এম কাদের সাহেব থাকবেন না। তাদের জন্য দুর্ভাগ্য এবং আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হলো জাতীয় পার্টির তৃণমূলের সব নেতাকর্মী আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তখন। এ জনই তাদের সাথে যাননি। সেই কায়েমী শক্তির রাজনীতি কতিপয় মানুষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। সে কারণে তারা সুবিধা করতে পারেননি। সরকার যদি তাদের কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন, যেটা তখন তারা বলেছিলেন। যদি এয়ারপোর্টে আমাদের কোনো নেতাকে বের হতে দেয়া হবে না। যদি আপনাদের সাথে জয়েন্ট করেন, তাহলে বের হতে দেয়া হবে। এটা কার কাছে শুনেছি আমরা। যারা আমাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে-তাদের মুখে শুনেছি। তারা বলেছেন, সরকার নাকি তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, জি এম কাদেরকে বাদ দিয়ে আপনারা আসেন আপনাদের মামলা মিমাংসা করা হবে। আমরা তাদের এসব কথার সত্য-মিথ্যা জানি না। কিন্তু বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রের মাধ্যমে সরকার এসব করেছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত। আমরা এই সরকারের কাছে এসব আশা করিনি।’

নিজেদের লোকেরা জাতীয় পার্টিকে একটি সার্কাস দলে পরিণত করেছিল দাবি করে জি এম কাদের বলেন, ‘২০১৪-এর পর জাতীয় পার্টি একই সাথে বিরোধী দল, একই সাথে মন্ত্রীসভার সদস্য। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে হতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ করেছিলাম। তখন জাতীয় পার্টি নিয়ে মানুষ হাসাহাসি করত। পরবর্তীতে যখন আমি বিরোধী দলীয় নেতা হলাম, আমি সরকারের বিপক্ষে কথা বলি। তখন আমার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে সরকারের পক্ষে কথা বলে আমরাই লোকজন। আমরা যখন ওয়াকআউট করতে যাই, তখন আমাদেরই লোক ওয়াকআউট না করতে আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন তারা আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়। এভাবে আমাদের লোকজনই আমাদের এই দলকে সার্কাস পার্টি বানিয়েছিল। আমরা একপাশে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলি, আরেকপাশে আমাদের লোকজন সরকারের পক্ষে কথা বলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে। সে কারণে ২০২৪ পর্যন্ত আমরা বিভিন্নভাবে সরকার, আওয়ামী লীগ ও আমাদের নিজেদের লোকের কাছে জিম্মি হয়েছিলাম।’

জুলাই আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে বেশি কথা বলেছি দাবি করে জি এম কাদের বলেন, ‘২০২৪-এর নির্বাচনের পরে যখন এই আন্দোলন হলো, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা এই জুলাই আন্দোলনে ছিলাম। প্রথম দিনই আমি বলেছিলাম যে এটা কোটা নয়, এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। এটা শুধু ছাত্রদের নয়, এটা ছাত্র-জনতা সবার। ওই সময় প্রতিদিনই আমি বলেছি, বৈষম্য এই দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। বৈষম্য সৃষ্টি করে আমাদের কর্তৃত্ববাদী সরকার দেশের মিখ্যাচার করে দেশকে লুণ্ঠন করছে। ওই সময় সরকারের বিরুদ্ধে আমার চেয়ে বেশি আর কেউ বলেনি। তথাপি আমার কথাগুলো গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ ওই সময় আমাদের পাশে যারা ছিল, আমাদের লোক তারা সরকারের কাছে গিয়ে আমার কথার বিরোধীতা করত।’

মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘একটা বিশাল অংশের মানুষকে বাদ দিয়ে দেশের সংস্কার টেকসই হতে পারে না। জাতীয় পার্টি কখনো জনগণের সাথে বেইমানি করেনি, করবেও না। যে সরকার মব নিয়ন্ত্রণ তৈরি করতে ব্যর্থ, সেই সরকারও ব্যর্থ, সেই সরকার ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রও ব্যর্থ হবে।’

কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, ‘বিগত সময়ে যারা জাতীয় পার্টির মহাসচিব ছিলেন, তারা শুধু দলটির মাথা বিক্রি করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার কারণে জাতীয় পার্টি থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন কনক্রিট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কখনোই সিদ্ধান্ত থেকে ইউটার্ন করা যাবে না, যত বড় শক্তিই হোক। জাতীয় পার্টিকে জনগণের জন্য রাজনীতি করতে হবে। এরশাদের আদর্শ, উন্নয়ন ও সংস্কার ভাবনা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।’

দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকেই এরশাদের কবর প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিল ও কোরআন খানি অনুষ্ঠিত হয়। এরশাদের রূহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাতেও অংশ নেন নেতাকর্মীরা।