শুঁটকির রাজ্যে ব্যস্ততা, বছরে উৎপাদন ১০০ টনের বেশি

কোরাল, লইট্টা, ছুরি, চিতল, হাইতা, মর্মা, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলাসহ ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ থেকে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

শফিকুল ইসলাম, পিরোজপুর

Location :

Pirojpur
শুঁটকির রাজ্যে ব্যস্ততা
শুঁটকির রাজ্যে ব্যস্ততা |নয়া দিগন্ত

‎পিরোজপুর সদর উপজেলার চিথলীয়া গ্রামের শুঁটকি পল্লী নদী ও সাগরের সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা এক ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ। কচা নদীর তীর ঘেঁষে সারি সারি বাঁশের মাচায় শুঁকাতে দেয়া মাছ, বাতাসে ভেসে থাকা শুঁটকির গন্ধ আর শ্রমিকদের অবিরাম কর্মব্যস্ততায় দিনভর মুখর থাকে এ পল্লী। শীত মৌসুম শুরু হলেই যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায় এলাকাটি।

‎খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ও বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় পিরোজপুর সদর উপজেলার পাড়েরহাটে একটি মৎস্য বন্দর গড়ে ওঠে। সে বন্দরের পাশেই চিথলীয়া গ্রামে ধীরে ধীরে বিকশিত হয় শুঁটকি পল্লী। পাড়েরহাট বন্দর থেকে সংগ্রহ করা সামুদ্রিক মাছ দিয়েই এখানে তৈরি করা হয় নানা জাতের শুঁটকি। অগ্রহায়ণ থেকে ফাল্গুন— এ চার মাসই শুঁটকি উৎপাদনের ভরা মৌসুম।

‎সরেজমিনে দেখা যায়, পাড়েরহাট মৎস্য বন্দরের দক্ষিণ পাশে কচা নদীর তীরে পাঁচটি বাসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শুঁটকি পল্লী। বর্তমানে এখানে পাঁচ থেকে সাতজন ব্যবসায়ী সক্রিয় রয়েছেন। তাদের অধীনে মৌসুমভেদে ১৫০ থেকে ২০০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কেউ দৈনিক, কেউবা মাসিক মজুরির ভিত্তিতে এখানে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

‎ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। কেউ বন্দর থেকে মাছ এনে পরিষ্কার করছেন, কেউ বড় মাছ কেটে প্রস্তুত করছেন, আবার কেউ লবণ পানিতে ধুয়ে বাঁশের মাচায় বিছিয়ে দিচ্ছেন শুকানোর জন্য। শুঁকিয়ে যাওয়া শুঁটকি বস্তাবন্দি করে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন মোকামে পাঠানোর উদ্দেশে।

‎ব্যবসায়ীরা জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে পাড়েরহাট এলাকায় একটি বাসা থেকে শুরু হয়েছিল এ শুঁটকির ব্যবসা। সময়ের সাথে সাথে তা বেড়ে দাঁড়ায় আট থেকে ১০টি বাসায়। তবে বর্তমানে স্থায়ীভাবে পাঁচটি বাসায় শুঁটকি উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। এখানে কোরাল, লইট্টা, ছুরি, চিতল, হাইতা, মর্মা, ঢেলা, মধু ফ্যাপসা, চাপিলাসহ ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ থেকে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

‎তারা আরো জানান, শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে এসব মাছের প্রাপ্যতা বেশি থাকে এবং ঠান্ডা আবহাওয়ায় শুঁটকির মান ভালো হয়। গরম বাড়লে শুঁটকির গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে শীতকালেই শুঁটকি পল্লীগুলো সবচেয়ে বেশি জমজমাট হয়ে ওঠে। মানভেদে প্রতি কেজি শুঁটকি ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

‎শুঁটকি ব্যবসায়ী খালেক ব্যাপারি বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে শুঁটকি তৈরি করি। কোনো ধরনের ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। ভালো মানের কারণে আমাদের শুঁটকির চাহিদা বিভিন্ন মোকামে অনেক বেশি।’

‎এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সঞ্জীব সন্নামত বলেন, ‘শীতের শুরু থেকে প্রায় চার মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন কার্যক্রম চলে। শুঁটকি তৈরির পদ্ধতি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত। মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি শুঁটকি উন্নয়ন কার্যক্রম শীর্ষক একটি প্রকল্পের প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তদারকি বাড়বে এবং এখানকার শুঁটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।’

Topics