বেতন কাঠামো নিয়েও অসন্তোষ

গ্যাস সঙ্কটে ১৬২ দিন ধরে বন্ধ আশুগঞ্জ সারকারখানা

বেতন কাঠামো নিয়েও অসন্তোষ বিরাজ করছে কারখানাটির শ্রমিক-কর্মচারিদের মধ্যে। ফলে লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Location :

Brahmanbaria
সমাবেশ ও গেট মিটিং করেছে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা
সমাবেশ ও গেট মিটিং করেছে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা |নয়া দিগন্ত

গ্যাস সঙ্কটের কারণে ১৬২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে আশুগঞ্জ সারকারখানার উৎপাদন। এতে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ টন হিসেবে প্রায় দু’লাখ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। দীর্ঘমেয়াদি এ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে লাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে বেতন কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে কারখানাটির শ্রমিক-কর্মচারিদের মধ্যে।

রোববার (১০ আগস্ট) সকালে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ ও ‘একই করপোরেশনে একই স্কেল বাস্তবায়ন’ দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গেট মিটিং করেছে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা।

আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো: বজলুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো: আক্তার হোসেন, ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউছার, বাংলাদেশ কেমিক্যালস ওয়ার্কার ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ এবং শ্রমিক নেতা মনিরুজ্জামান পাভেল প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে শ্রমিক-কর্মচারীরা কারখানার অভ্যন্তরে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পরে ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ কারখানার মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংযোগ ও ‘একই করপোরেশনে একই স্কেল বাস্তবায়ন’ দাবিতে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।

ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একই করপোরেশনের আওতায় থাকা বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীরা ভিন্ন ভিন্ন বেতন স্কেলে আছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য তৈরি করছে। পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তারা বলেন, চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত টানা ১৬২ দিন গ্যাস সরবরাহ না থাকায় কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ মেট্রিকটন হিসেবে প্রায় দু’লাখ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে বেতন কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে কারখানাটির শ্রমিক-কর্মচারিদের মধ্যে। ফলে লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি ভবিষ্যতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়তে পারে।

শ্রমিক-কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, একই করপোরেশনের আওতায় থাকা বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও কর্মকর্তারা ভিন্ন ভিন্ন বেতন স্কেলে আছেন, ফলে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্য চলছে। তাদের দাবি বিসিআইসির সব প্রতিষ্ঠান ও উপপ্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য সমান জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর করতে হবে।

ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: আবু কাউছার বলেন, আমরা বারবার কারখানায় দ্রুততম সময়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ ও শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন স্কেলের বিষয়ে ন্যায্য দাবির কথা জানিয়েছি, কিন্তু সমাধান হয়নি। তাই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে দাবির ন্যায্যতা তুলে ধরছি।

ইউনিয়নের সভাপতি মো: বজলুর রশীদ সতর্ক করে বলেন, দ্রুততম সময়ে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ ও শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন স্কেলের বিষয়টি যদি সমাধান না হয়, তাহলে আন্দোলনের পরিধি আরো বিস্তৃত করা হবে।