অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ

মেহেরপুর-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশের অবৈধ স্থাপনা ভাঙতে হবে

‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে বিভিন্ন সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের সাথে জড়িত।’

রাশিদুল ইসলাম বোরহান, গাংনী (মেহেরপুর)

Location :

Gangni
গাংনীতে রাস্তা নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
গাংনীতে রাস্তা নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাকিল আহমাদ বলেছেন, অনিতিবিলম্বে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সকল ধরনের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলতে হবে। ২০২৩ সালের মার্চে সরকার মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু কোনো বিশেষ ব্যক্তির কলকাঠি নাড়ানোর কারণে কয়েকটি দোকান ভাঙার পর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। গাংনী থেকে কুষ্টিয়াগামী রাস্তার বাম পাশের একটি বড় সংখ্যক অবৈধ স্থাপনা এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। কোন কারণে সেগুলো এখনো অপসারণ করা হয়নি প্রশাসনের কাছে সে প্রশ্ন করেন তিনি।

প্রশাসনকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলা শহরে রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন করার দাবি জানান তিনি।

শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলা শহরের বড়বাজার এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ইঞ্জিনিয়ার রাশিদুল ইসলাম বোরহানের সভাপতিত্বে এ মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাংনী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, গাংনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা রুহুল আমিন, যুব সঙ্ঘের জেলা সংগঠক মোজাহিদুল ইসলাম, গাংনী বাজারের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা সোহরাব হোসেন, জামাল উদ্দিন প্রমুখ।

সাকিল আহমাদ বলেন, ‘মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের গাংনী উপজেলা শহরের অবৈধ স্থাপনা না ভাঙার জন্য কারা কারা কত টাকা লেনদেন করেছেন সে বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। অবৈধ স্থাপনা কেন ভাঙা হয়নি জনগণের কাছে তার জবাবদিহিতা করতে হবে। জবাবদিহিতা না করলে কার কাছে কত টাকা খেয়েছেন কারা কারা খেয়েছেন সেটাও প্রকাশ করা হবে। সেদিন পালাতে হবে।’

রাস্তার দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ না করা প্রসঙ্গে সাকিল আহামদ বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে বিভিন্ন সরকারি আমলা ও রাজনৈতিক দলের নেতারা অবৈধ স্থাপন উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের সাথে জড়িত।’

সাকিল আহমাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের যতগুলো বড় রাস্তা বাস্তবায়ন হচ্ছে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ তার মধ্যে একটি। রাস্তাটির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও গাংনী উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় এক শ’ মিটার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। যার কারণে, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ রাস্তাটিতে চলতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ‘

তিনি বলেন, ‘রাস্তা নির্মাণের কাজ আটকে থাকলে এই ঠিকাদার কাজটি করতে পারবে না। পরে দুই/চার বছর এই রাস্তার কাজ করা সম্ভব হবে না। ফলে এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে।’

তিনি সড়ক বিভাগকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ‘আগামীকাল থেকে এই রাস্তার কাজ শুরু হয়ে শেষ হতে হবে। এই রাস্তা নির্মাণের মূল সমস্যা তৈরি হয়েছে ইন্টারসেকশন নিয়ে। এই ইন্টারসেকশনের সমাধানও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হতে হবে।’

তিনি জেলা প্রশাসক ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনুরোধ করেন ঠিকাদারকে তাগাদা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য।

তিনি বলেন, ‘কেউ অর্থনৈতিক বা অন্য কোনো সুবিধা নেয়ার জন্য রাস্তা নির্মাণ বাধাগ্রস্ত করতে চায় তাদের আমরা হুঁশিয়ারি করতে চাই, আপনারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।’

তিনি আরো বলেন, ‘যে জনগণ ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভয় পাইনি, সেই জনগণ আপনার চোখ রাঙানি কিংবা হুমকি ভয় পায় না।’

গাংনী পৌর সভার ড্রেন নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে সাকিল আহমাদ বলেন, ‘পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে নির্মাণে আকাঁবাঁকা সাপের মতো করা হচ্ছে। অনেকেই অভিযোগ করছেন ‘বাড়ির সামনে ভাঙবোনা দাও টাকা, বাড়ির সামনে ড্রেন নির্মাণ না করে ড্রেন অন্য দিকে চাপিয়ে দেব দাও টাকা। যারা এসব কাজের সাথে জড়িত তাদের ফিরে আসার অনুরোধ করেন তিনি।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জনগণের ও এলাকার উন্নয়নের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না।’

তিনি তিনটি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকাশ করুন রাস্তার পাশে আপনাদের যে জমিতে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে কেনো ভাঙা হয়নি? যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে অনতিবিলম্বে তা অপসারণ করতে হবে। আগামীকাল থেকে মূল রাস্তার কাজ শুরু হতে হবে। মূল রাস্তার কাজ শুরু হলে ইন্টারসেকশনের কাজ শেষ করতে হবে। এখানকার ব্যবসায়ীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। কোনো প্রকার অনৈতিক সুবিধা না দিয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। সেখানে কেউ বাধা দিলে জনগণের সাথে তাদের লড়াই বাধবে। কেউ ভয় পাবেন না। ভয় পাওয়ার দিন শেষ। এখন পরিবর্তনশীল বাংলাদেশে পরিবর্তন চাই। কোনো লেজুড়বৃত্তি ও চাঁদাবাজদের ভয় পাবেন না।’

উল্লেখ্য, প্রায় সাড়ে ছয় শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে হলেও গাংনী উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় এক শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।