সুনামগঞ্জে ১৫ গ্রামের মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ, ভরসা সাঁকো

বাজিতপুর গ্রামের সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করা যাবে।

সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)

Location :

Dowarabazar
জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো
জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো |নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা সদর বাজিতপুর-বঘুরামপুর খালের সেতু ভেঙে যাওয়ায় দীর্ঘদিন দুর্ভোগে আছে উপজেলা সদর, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও এবং মান্নারগাঁওসহ প্রায় ১৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এতে চলাচলের একমাত্র ভরসা জরাজীর্ণ বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দোয়ারাবাজার ইউনিয়নের বাজিতপুর এবং দোহালিয়া ইউনিয়নের বঘুরামপুর গ্রামের খালের উপর প্রায় ৩৩ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালের ভয়াবহ প্রলয়নকারী বন্যায় সেতুটি ভেঙে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দু’পারের এসব এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দোয়ারাবাজার ইউনিয়নের বাজিতপুর, দোহালিয়া ইউনিয়নের কুমারিনীকান্দি, জীবনপুর, ভবানীপুর, রামনগর, পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের মঙ্গলপুর, সর্দারপুর, সাহেবের গাঁও, মান্নার গাঁও ইউনিয়নের চন্ডিপুর, ইদনপুর, লামাগাও, উলুকান্দীসহ চারটি ইউনিয়নের অন্তত ১৫ থেকে ২০ গ্রামের বাসিন্দা, দোহালিয়া বাজার, মজুর বাজার, শ্রীপুর বাজার, শ্যামলবাজার, আমবাড়ী বাজারে যাতায়াতকারী এবং মঙ্গলপুর বাজার দারুলহেরা দাখিল মাদরাসা, কুমারিনীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল মাদানী একাডেমি মজুর বাজার, মজুর বাজার মাদরাসা এবং কুমারিনীকান্দি মাদরাসাসহ এসব ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা একমাত্র এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতু ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয়দের নিজস্ব অর্থায়নে ৩৫ মিটারের দীর্ঘ সাঁকো নির্মাণ করে তিন বছর ধরে চলাচল করছে এলাকাবাসী। ২০২৪ সাল থেকে বাঁশের সাঁকোটি পুণনির্মাণের ফান্ড কালেকশন না হওয়ায় তা আর সংস্কার করা হয়নি। যার ফলে কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না সাঁকো দিয়ে। আতঙ্ক নিয়ে স্থানীয় মানুষদের হেঁটে চলাচল করা হচ্ছে। এতে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

স্থানীয় বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহিন আলম বলেন, বাজিতপুর -রঘুরামপুর খালে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে বয়স্ক মানুষ আতষ্ক নিয়ে যাতায়াত করেন। একটু বৃষ্টি হলে সাঁকোর কাঠ ও বাঁশ পিচ্ছিল হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে, অনেক জায়গায় ভেঙে পড়েছে কাঠ। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেকেই দুর্ঘটনার ভয়ে স্কুলে আসে না। জরুরি রোগী নেয়ার সুযোগ নেই। ১৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করার দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী সুমন আহমদ জানান, বাজিতপুর সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় তিন বছর ধরে এলাকার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ ও বেশ কয়েকটি স্কুল-মাদরাসায় যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সংস্কার না করায় কাঠ সরে গিয়ে আলাদা হয়ে আছে। একটু বৃষ্টি হলেই মানুষ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজনে অনেকে আতষ্ক নিয়ে চলাচল করলেও প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন এলাকাবাসী। একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন। তার আগে জনসাধারণের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে একটি গার্ডার সেতু স্থাপন করা প্রয়োজন।

দোয়ারাবাজার উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা (প্রকৌশলী) আব্দুল হামিদ বলেন, বাজিতপুর গ্রামের সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করা যাবে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ জানান, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। সরেজমিনে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার উদ্যোগ নেয়া হবে।