রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র ভাঙনে সর্বহারা শতাধিক পরিবার

‘নদ ভাঙনরোধে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হয়েছে। গত দু’দিন আগেও এক কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা দিয়ে চরশৌলমারী হবিগঞ্জ বাজারের পাশে কাজ শুরু করা হয়েছে।’

মোস্তাফিজুর রহমান তারা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)

Location :

Kurigram
রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র ভাঙনে সর্বহারা শতাধিক পরিবার
রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র ভাঙনে সর্বহারা শতাধিক পরিবার |নয়া দিগন্ত

রৌমারীতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের প্রচণ্ড স্রোতে এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদের এ ভাঙনে সর্বহারা হয়ে পড়েছেন প্রায় শতাধিক পরিবার।

বৃহস্পতিবার (১২ ‍জুন) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলার ৬ নম্বর চরশৌলমারী ইউনিয়নের সোনাপুর, সুখেরবাতি, মিয়ারচর, হবিগঞ্জ, ঘুঘুমারীতে ভাঙনের তাণ্ডব দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাগুলো নদ ভাঙনের কবলে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে বালুচরে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, মূলত অঞ্চলটি ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় ভারত থেকে বয়ে আসা ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা নদ এ এলাকার মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নদটি ভারতের আসাম থেকে আঁকাবাঁকা পথে বাংলাদেশের ১০৪৭ হতে ১০৪৯ সীমান্ত রেখা ভেদ করে সাহেবের আলগা, ডিগ্রির চর হয়ে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়।

এদিকে কোনো প্রকার সীমান্ত বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজেই ভারতীয় পাহাড়ি ঢল বা বৃষ্টির পানি এ নদে প্রবেশ করছে। ফলে পাহাড়ি ঢলে রৌমারীর চরশৌলমারী ও বন্দবেড় ইউনিয়নের অসংখ্য এলাকা নদ ভাঙনের শিকার হয়।

ওই এলাকার জসিম উদ্দিন মাস্টার (৮০), আব্দুল বারেক (৭৫), সামছুল হক (৭৮) ও আব্দুর রহিম (৬৫) জানান, ‘আজ থেকে ২ বছর আগে এ নদ ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে ছিল। সেখানে তিনটি গ্রাম ছিল যেখানে হাজার লোকের বসবাস ছিল এবং কয়েক শত হেক্টর ফসলি জমি ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ছিল। সবই ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে ধূ ধূ নদ ও বালুচরে পরিণত হয়েছে। নদ ভাঙা মানুষগুলো মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজতে কেউ সরকারি রাস্তার পাশে, কেউ অন্যের জমিতে আবার কেউ বা নদীর সাথে অভিমান করে বিভিন্ন শহরের অলিগলিতে ঝুপড়ি ঘর বেধে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই!

সুখেরবাতি গ্রামের ময়না বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘বছরের পর বছর নদ ভাঙনের তাণ্ডবে সুখেরবাতি গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। সরকারি বরাদ্দ কোনো কাজে আসে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর সরকার নদ ভাঙন রোধ ও নদের নাব্যতা দূরীকরণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও তা যেন কাগজে কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখানো হয়। নদ ভাঙনরোধে শুকনো মৌসুমে কাজ না করে সরকারি টাকা লুট করার লক্ষ্যে বর্ষা মৌসুমে সরকার বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ঠিকাদাররা কর্তৃপক্ষের সাথে আঁতাত করে লোক দেখানো কর্মসূচি হাতে নিয়ে কিছু বস্তা বালু পানিতে ফেলে সরকারি বরাদ্দের টাকা লোপাট করে থাকে।’

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানান, ‘নদ ভাঙনরোধে ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হয়েছে। গত দু’দিন আগেও এক কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা দিয়ে চরশৌলমারী হবিগঞ্জ বাজারের পাশে কাজ শুরু করা হয়েছে।’