গত বছরের জুলাই বিপ্লবে কিশোরগঞ্জ কটিয়াদীর মো: সাইফুল ইসলাম (৩৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে এখনো যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে ৩ আগস্ট গলায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
উপজেলার সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের নোওবারিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে মো: সাইফুল ইসলাম। তার সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, বাবা, ভাই ও দাদী রয়েছেন।
তার জীবন সংশয়ের মধ্যে রয়েছে। তিনি কোনো কাজ করতে পারছেন না। গলায় গুলি নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। আটকে যাওয়া গুলি কিভাবে বের করা যায় তা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। অর্থনৈতিক সংকট থাকার কারণে গুলি বের করার সামর্থ্য নেই তার পরিবারের।
গলায় গুলি আটকে থাকার যন্ত্রণা নিয়েই সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে তার। অন্যদিকে তার চিকিৎসার ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
গুলিবিদ্ধ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের জুলাই বিপ্লবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। খুব কষ্ট করে খাবার খাওয়া এবং শ্বাস নিতে হচ্ছে। এ জন্য গলায় ছিদ্রও করা হয়েছে। আমার চিকিৎসার জন্য জুলাই ফাউন্ডেশন ও উপজেলা থেকে দুই লাখ টাকা সরকারি অনুদান পেয়েছি। কিন্তু তাতে আমার গলার গুলি সরানো যাচ্ছে না। উন্নত চিকিৎসার জন্য আরো টাকার প্রয়োজন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারিভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আমার নাম আহত জুলাইযোদ্ধা গেজেটের ৬৫৯ নম্বর তালিকায় রয়েছে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন সকাল ১০টার দিকে ঢাকার গুলিস্তানে ছাত্র-জনতার মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও ছাত্রলীগের এলোপাতাড়ি গুলি যখন আমার গলায় বিদ্ধ হয় তখন আমার মনে হয়েছিল আমি মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটনাস্থল থেকে ছাত্র-জনতা আমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। গুলি আমার থুতনি দিয়ে ঢুকে গলায় আটকে যায়। পরে গলা থেকে গুলি বের করতে পারেননি ডাক্তাররা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ১৭ দিন চিকিৎসায় থেকে আমি গ্রামের বাড়ি ফিরে আসি। আমি তখনকার সময়ে বাসের হেল্পার হিসেবে কাজ করতাম। সেখান থেকে যে আয় করেছিলাম সেটা আমার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয়ে গেছে। আমি এখন অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছি।’
তার স্ত্রী হিমা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তার কাঁধে এখন পুরো সংসারের দায়িত্ব। সংসারের অন্য কোনো উপার্জন না থাকায় তার চিকিৎসা ও সংসার চালানোই আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।’
তার বাবা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গুলি করে মেরে ফেলতে চেয়েছিল আমার ছেলেকে। আমি নিষিদ্ধ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’