কটিয়াদীতে শতবর্ষী ফেরিওয়ালার জীবন যুদ্ধ

কারো কাছে হাত পাতেননি কখনো। এখন বয়স ও অসুস্থতায় শরীর সাড়া দিচ্ছে না কিন্তু কাজ ছেড়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।

ফখর উদ্দিন ইমরান, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)

Location :

Kishoreganj
জীবন যুদ্ধে শতবর্ষী রইস উদ্দিন।
জীবন যুদ্ধে শতবর্ষী রইস উদ্দিন। |নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে কুঁজো হয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছিলেন এক বৃদ্ধ। কখনো থেমে গামছা দিয়ে মুছছেন গায়ের ঘাম, কিন্তু যেন বৃষ্টির মতো ঝরছে তার পরিশ্রমের স্রোত। কাঁধে বাঁশের ফলা, দুই পাশে ঝুলছে নতুন-পুরাতন কাপড়ভর্তি ঝুড়ি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর, তবুও থেমে নেই তার পথচলা।

তিনি কটিয়াদী উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের আতকাপাড়া গ্রামের মরহুম নায়েব আলীর ছেলে রইস উদ্দিন। তার দাবি অনুযায়ী ইতোমধ্যেই প্রকৃত বয়স ১০০ পেরিয়েছে।

জীবনের ৫০ বছর ধরে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ক্লান্ত শরীরে প্রতিদিন গ্রামের পথে পথে হেঁটে চলে তার জীবনযুদ্ধ।

যুগের পর যুগ পেরিয়ে এসেছেন কিন্তু জীবনে সচ্ছলতা কখনো আসেনি। আশপাশের গ্রামবাসীদের অনেকেই জীবনে উন্নতি করেছেন অথচ রইস উদ্দিনের জীবনে ‘সুখ’ এখনো এক অধরা স্বপ্ন। জীবনের কষ্ট যতই থাক, কারো কাছে হাত পাতেননি কখনো। এখন বয়স ও অসুস্থতায় শরীর সাড়া দিচ্ছে না, কিন্তু কাজ ছেড়ে বসে থাকার সুযোগ নেই।

রইস উদ্দিনের স্ত্রী আদর বানু (৬০) বলেন, ‘দুঃখ-কষ্ট আমাদের জীবনের সঙ্গী। কত রোজা গেছে না খেয়ে, এখন বয়স হয়েছে, শরীরে অনেক কিছু খেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সামর্থ্য নেই।’

রইস উদ্দিনের স্ত্রী আরো বলেন, ‘তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। মেয়েদের আগেই বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে এক বছর আগে মারা গেছেন। বেঁচে থাকা একমাত্র ছেলে ফালু মিয়া নিজের সংসার সামলাতেই ব্যস্ত। তাই বাধ্য হয়েই একই বাড়ির উঠানে আলাদা ঘরে বৃদ্ধ দম্পতির চলে নিঃসঙ্গ সংসার।

বাবার জন্য পুঁজি আর একটি দোকান হলে শেষ সময়ে একটু আরামে কাটতো বলে জানান ছেলে৷

রইস উদ্দিন বলেন, ‘শক্তি যতটুকু আছে, কাজ করে চলছি। ভিক্ষা করব না। পুঁজি কম, তাই মালামালও কম। এখন পুরাতন কাপড় মানুষ নেয় না। একটা দোকান আর একটু পুঁজি থাকলে চলতে পারতাম।’

এলাকাবাসী জানান, স্বাধীনতার আগে পাকিস্তান আমলে রইস উদ্দিন তরকারির ব্যবসা করতেন। পরে ক্ষুদ্র ব্যবসার নানা পথ পেরিয়ে কাপড় ফেরি করা শুরু করেন। আজও সেই পুরনো ঝুড়ি নিয়েই ঘোরেন গ্রামে গ্রামে। তবে এখন শারীরিক অসুস্থতা ও পুঁজির অভাবে প্রায়ই ঘরে আটকে পড়তে হয়।

এলাকাবাসী আরো জানান, রইস উদ্দিনকে যদি সরকারিভাবে সাহায্য করা হত তবে রইস পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসতো।