আরো ১০ জেলায় হামলা হলেও আমাদের দমানো যাবে না : নাহিদ ইসলাম

‘মুজিববাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঘোষণা করেছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, এই লড়াই সমাপ্ত না করা পর্যন্ত আমরা থামব না।’

আব্দুস সালাম, মুন্সীগঞ্জ

Location :

Munshiganj
মুন্সীগঞ্জে এনসিপির পথসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নাহিদ ইসলাম
মুন্সীগঞ্জে এনসিপির পথসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন নাহিদ ইসলাম |নয়া দিগন্ত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিটি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘গোপালগঞ্জে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। আরো ১০টি জেলায় হামলা হবে। তারপরও আমাদের দমন করে রাখা যাবে না। মুজিববাদের বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঘোষণা করেছি, ফ্যাসিবাদবিরোধী যে লড়াই আমরা শুরু করেছি, এই লড়াই সমাপ্ত না করা পর্যন্ত আমরা থামব না।’

শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে বিচার, সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে মুন্সীগঞ্জ শহরে আয়োজিত জুলাই পদযাত্রায় ও পথসভা অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা যে লড়াই শুরু করেছি তা চালিয়ে যাব। আমাদের সাথে উপরওয়ালা (আল্লাহ) আছেন, দেশের জনগণ আছেন। ভয়ের কোনো কারণ নেই। সামনে আরো একটি লড়াই আসছে। সে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

মুন্সীগঞ্জে অবৈধ বালু উত্তোলন, নদীভাঙন, মুন্সীগঞ্জ সড়কপথের বেহাল দশা, ভঙ্গুর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘এই মুন্সীগঞ্জে নদীভাঙন হচ্ছে। চাঁদাবাজি হচ্ছে। প্রতিমাসে নদীভাঙনে নতুন নতুন জনগণ উদবাস্তু হচ্ছে। আমরা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করব। নদী-দুর্যোগ থেকে রক্ষা করব আমরা। অবৈধ বালু উত্তোলন, চিকিৎসা সেবায় আমূল পরিবর্তন আনব আমরা। এ জেলায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দুর্গতি রয়েছে। এ জন্য মুন্সীগঞ্জের মানুষ গণঅভ্যুত্থানে যেভাবে প্রতিবাদ করেছিল, সেভাবে জেগে উঠতে হবে। এলাকায় এলাকায় প্রতিবাদের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই মুন্সীগঞ্জে হাজার মানুষ প্রবাসে থাকেন। আমরা সেই ভোটার প্রবাসীদের ভোটাধিকারের পক্ষে কথা বলেছি। অনেকেই বলছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারের অধিকার নেই। তারা কেন ভোট দেবেন? আমরা বলতে চাই, প্রবাসারা দেশের অংশ। তারাও জুলাই যুদ্ধে অবদান রেখেছেন, তাই আমরা তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করব।’

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি মুন্সীগঞ্জবাসীর অধিকার রক্ষা এবং নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রস্তুত। মুন্সীগঞ্জবাসী, আমরা জানি মুন্সীগঞ্জের ইতিহাস। প্রাচীন বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী। বিক্রমপুর থেকে ইদ্রাকপুর। জাতীয় প্রাচীন সভ্যতায় অন্যতম ভূমিকায় ছিল এই মুন্সীগঞ্জ। অনেকম মহান ও মহৎ মানুষের জন্মস্থান এই মুন্সীগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জ মহৎ মানুষদের জন্ম দেয়। প্রতিভাবান ও প্রতিবাদী মানুষদের জন্ম দেয়। অতীশ দিপঙ্করের এই মুন্সীগঞ্জ। বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ইদ্রাকপুরের ইতিহাস ধারণ করে মুন্সীগঞ্জ এগিয়ে নিতে চাই।’

পথসভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যে সংস্কার চাচ্ছি এই সংস্কার নির্দিষ্ট কোনো দলের নয়। সংস্কার বাংলাদেশের পক্ষে, জনগণের পক্ষে। আমরা দেখেছি অতীতে নেতাকে পূজা করা হয়েছিল। আমরা চাই পরবর্তী বাংলাদেশে এরকম যেন আর না হয়। এদেশ আর নেতা নির্ভর হবে না, নীতি নির্ভর দেশ হবে বাংলাদেশ। নেতা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। ফ্যাসিস্টবিরোধী মত ও সকল রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে, পরবর্তী বাংলাদেশ নির্মাণে সবাইকে ঐক্যভাবে কাজ করতে হবে।’

হাসনাত আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য অবশ্যই তরুণ প্রজন্মের মানুষকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। কোনো গোলামীকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। জুলাই আগস্টের ঘোষণাপত্রের জন্য আগস্টের ৩ তারিখ আবার সবাই একত্র হব।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গোপালগঞ্জে হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশ ফ্যাস্টিবাদী পরিপূর্ণভাবে মুক্ত হয়নি। ফ্যাস্টিস মুক্ত করতে বাংলাদেশ আরো অনেক পথ বাকি। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সেই পথ পাড়ি দিতে হবে। আমরা কিছুদিন আগে গোপালগঞ্জে যাই, আমরা ভেবেছিলাম একটি স্বাধীন বাংলাদেশের অংশ সেই গোপালগঞ্জ। কিন্তু আমরা দেখেছি স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানা হয়ে গড়ে উঠেছে গোপালগঞ্জ। গণহত্যার নির্দেশদাতা, বিডিয়ার হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা, জুলাই ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশদাতার ফাঁসি নিশ্চিত করে মরতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু গোপালগঞ্জ নয়, পুরো বাংলাদেশের যেখানে সশস্ত্র ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসীরা থাকবে, সেখানে আমাদের দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। আমরা যদি ফ্যাসিবাদের জায়গা করে দেই, তাহলে আগামীর বাংলাদেশ তারা আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।’

পদযাত্রা ও পথসভাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ভোর থেকেই দলটির মুন্সীগঞ্জ শহরের নেতাকর্মীরা সুপার মার্কেট এলাকায় সমবেত হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নেতাকর্মীদের জটলা বাড়তে থাকে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সুপার মার্কেট এলাকায় দুপুর সোয়া একটা পর্যন্ত সভা চলে।

এর আগে, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে শহরের পুরাতন কাচারী এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পদযাত্রা বের করে শহরের দক্ষিণ কোর্টগাঁও এলাকার পতাকা একাত্তর, পুরাতন কাচারী হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার আল্লাহ চত্বর ঘুরে কৃষিব্যাংক মোড়ে এসে পথসভায় মিলিত হন এনসিপির নেতাকর্মীরা।

পথসভায় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মো: মেহেদী হাসানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। জেলা সমন্বয়ক কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মাজেদুল ইসলামের বক্তব্যের মাধ্যমে পথসভা শুরু হয়।