রংপুরে দম্পতি খুন : গ্রেফতার ১

গ্রেফতারের পর যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় মোরসালিনকে। তার দেখানো স্থান থেকে আলমারি ভাঙার কাজে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
গ্রেফতার মোরসালিন
গ্রেফতার মোরসালিন |নয়া দিগন্ত

রংপুরে দম্পতি খুনের ঘটনায় বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোরসালিনকে (১৯) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, আট হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় ছিল তার। ওই টাকা জোগাড় করতেই সে খুন করে রংপুরের তারাগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশচন্দ্র রায় ও তার স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে তারাগঞ্জের পূর্ব রহিমাপুর হিন্দু পল্লীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার মোরসালিনকে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধার করতে গিয়ে এ তথ্য জানান রংপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের ফাজিলপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মোরসালিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়।

এ ঘটনায় ব্যবহৃত কুড়ালের লাঠি এবং আলমারি ভাঙা দা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মোরসালিনের স্বীকারোক্তির উদ্ধৃতি দিয়ে এসপি ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘তারাগঞ্জ কলেজের বিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোরসালিন আট হাজার টাকা ঋণের মধ্যে ছিল। ওই টাকা সে কোনোভাবেই পরিশোধ করতে পারছিলেন না। পড়ালেখার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির জোগালির কাজ করতেন তিনি। ঘটনার কয়েকদিন আগে ওই বাড়িতে টাইলস মিস্ত্রির সাথে যোগালির কাজ করেছিলেন তিনি। এ সময় তার ধারণা হয় এ বাড়িতে অনেক টাকা পয়সা আছে।’

ব্রিফিংয়ে তিনি আরো বলেন, ‘টাকা-পয়সা পরিশোধের চাপে পড়ার কারণেই ঘটনার দিন নিজ বাড়িতে থাকা কুড়াল নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশচন্দ্র রায়ের বাড়ির পেছনের আম গাছ দিয়ে দেয়াল টপকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে মোরসালিন। প্রথমেই রান্নাঘরে বেসিনে থালাবাসন ধোয়া অবস্থায় সুবর্ণা রায়কে মাথায় আঘাত করেন এবং পরে একই কায়দায় বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়কে হত্যা করেন। এরপর যোগেশের বাড়িতে থাকা একটি দা দিয়ে স্টিলের আলমারি ভেঙে ফেলেন। কিন্তু তাতে কোনো টাকা-পয়সা না পাওয়ায় যে পথে ঢুকে ছিলেন সেই পথ দিয়েই বের হয়ে যান তিনি। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়ালটি পাশের মজা পুকুরে ফেলে দেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেফতারের পর যোগেশ চন্দ্র রায়ের বাড়িতে নিয়ে আসা হয় মোরসালিনকে। তার দেখানো স্থান থেকে আলমারি ভাঙার কাজে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়। এরপর মজা পুকুরে তার দেখানো স্থান থেকে কুড়ালের বাঁশের লাঠিটি উদ্ধার করা হয়। লাঠিতে রক্তের দাগ ছিল। এরপর তার দেখানো মতে মজা পুকুর থেকে লোহার অংশ উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য স্যালো মেশিন দিয়ে পুকুরটির পানি সেচ এবং এরই মধ্যে ডুবুরিও আনা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘মোরসালিনের বয়স ১৯ থেকে ২০ বছর। সম্পূর্ণ টগবগে চেহারা তার। পেছনে তার কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড পাইনি আমরা। পেশাদার খুনিও নয় তিনি। শুধু টাকার জন্যই একাই এতো বড় জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি মনে করেছেন, যেহেতু লাশের সৎকার করা হয়েছে, কেউ টের পাবে না। যে কারণে বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন তিনি। আমরা তাকে ধরে নিয়ে আসার দুই-তিন ঘণ্টা পর তিনি বুঝতে পারেন যে, ওই ঘটনায় তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি।’

গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা প্রসঙ্গে মামলার বাদি শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘গ্রেফতারের বিষয়ে স্বস্তি পাচ্ছি, কিন্তু এর পেছনে কে বা কারা জড়িত এটা এখনো তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান। যেহেতু আমার সিনিয়র স্যাররা আছে তদন্তের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত চলছে চলুক, শেষ পর্যন্ত কি রেজাল্ট আসে, কারা কারা জড়িত আছে, উদঘাটন হোক। অবশ্যই কেউ না কেউ জড়িত আছে। স্যারদের সাথে কথা বলি তারা আমাকে কী বলেন, তারপর বোঝা যাবে।’

শোভেন বলেন, ‘মাত্র আট হাজার টাকার জন্য মা-বাবাকে হত্যা করেছে এটা মনে হচ্ছে না। এটা তো আমরা এখন পর্যন্ত মেনে নিচ্ছও না। এখানে এর পেছনে আরো লোক আছে বা থাকতে পারে। তদন্ত চলছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমিও কিছু বলতে পারবো না। আমাদের জানতে হবে। না জানা পর্যন্ত আমি কিছু বলতে পারছি না। আমরা তো দুই ভাইয়ে বাইরে থাকি। চার-পাঁচ দিনের জন্য আসি। বাবা বাজার করতেন, মা রান্না করতেন। বাবাই সব করতেন।’

এদিকে ঘটনার দিন বীরমুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায়ের বড় ছেলে সোহেল চন্দ্র রায় বলেছিলেন, ‘ও যে সামনে একটা শ্মশান দেখতেছেন, ওই জমিটা বাবা দান করেন। তখন থেকে বাবার কিছু শত্রু তৈরি হয়। কেনো দান করা হলো জমি? এটা নিয়ে যে শত্রুতা তৈরি হয়েছে এটা এলাকাবাসী সবাই জানে। এলাকাবাসীর মুখে যতটুকু শুনি, মোবাইল ফোনে যতটুক শুনি, মা-বাবা এটা নিয়ে খুব হুমকির মধ্যে ছিলেন। তারা এ নিয়ে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন যে, যখন-তখন তাদেরকে মারতে পারে। এছাড়া আরো একটি জমি আছে আমাদের। ওই জমিতে বাবার বাবা একজনকে বাড়ি করে থাকতে দিয়েছিলেন। তিনি উঠে গেছেন। ওই জমিটা নিয়েও গনণ্ডগোল। আমার বাবার শত্রু বলতে আমার গ্রামের মানুষ। এটাই ফাইনাল কথা। আপাতত আর কিছু বলছি না। সিনিয়র স্যাররা এসেছেন। তারা দেখছেন। আমি চাই এ ঘটনার পাঁচ দিনের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে বিচার নিশ্চিত করা হোক।’