কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন নিয়োগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ

নিয়োগ কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদকে চাওয়া হলেও জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমকে অন্তর্ভুক্ত করেন।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

Location :

Kushtia
কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন নিয়োগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ
কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন নিয়োগে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ |নয়া দিগন্ত

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির কয়েকজন সদস্যের সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সিভিল সার্জন অফিসের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নিয়োগ কমিটির প্রধান খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. মুজিবুর রহমান এবং সদস্য সচিব কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করলেও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের কারণে বাধার সম্মুখীন হন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কমিটির সদস্যরা হলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির, পিএসসি খুলনার উপ-পরিচালক নাসরিন সুলতানা, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মনোনীত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম এবং সদস্য সচিব ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন।

সূত্র জানায়, গত ২৪ অক্টোবর পরীক্ষার আগের রাতে শহরের টালিপাড়া ও কালিশংকপুর এলাকায় পরীক্ষার্থীদের নিয়ে আলাদা ক্লাস করে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। সাংবাদিকদের তৎপরতায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। এতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা. হোসেন ইমাম এবং তার ভাই, সিভিল সার্জন অফিসের উপ-সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান ইমাম নান্নুর নাম উঠে আসে।

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের সময় কমিটির সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহার, ব্যক্তিগত ল্যাপটপে প্রশ্ন কম্পোজ, নির্ধারিত কর্মচারী ছাড়া অন্যকে দিয়ে প্রশ্নপত্র কম্পোজ করানোসহ একাধিক নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে রুমে বসে মোবাইল ব্যবহার করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয়ের কর্মচারী মাহাবুবকে দিয়ে প্রশ্ন কম্পোজ করানোর অভিযোগ রয়েছে। সিভিল সার্জনের আপত্তি সত্ত্বেও তিনি রূঢ় আচরণ করেন বলে জানা যায়।

সূত্র আরো জানায়, সিভিল সার্জন অফিসে স্থাপিত সিসি ক্যামেরার তার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ পরীক্ষার দিন সকালে জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন কোনো কারণ ছাড়াই সিভিল সার্জন অফিসে উপস্থিত হন, যা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির ফোন কেটে দেন এবং নাসরিন সুলতানা ফোন ধরেননি।

কমিটির প্রধান ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন।’

সূত্র জানায়, নিয়োগ কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল ওয়াদুদকে চাওয়া হলেও জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলমকে অন্তর্ভুক্ত করেন। নিয়োগে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, যা গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল, যেখানে একই উপ-সচিব শাহাদত হোসেন কবির সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ওই সময়ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, যা ধামাচাপা পড়ে যায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কুষ্টিয়া উপ-পরিচালক রওশনী হাসান দ্বিতীয়বারের মতো সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধার করেছেন। তদন্ত সংস্থাগুলো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।