কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের মানবিকতা, বাংলোতে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের আতিথিয়তা

বিজয় দিবসের দিন দুপুরে ২৩ জন বৃদ্ধা এবং ওই প্রতিষ্ঠানের দু’জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের আমন্ত্রণে তার বাংলোতে গিয়েছিলেন।

আ ফ ম নুরুল কাদের, কুষ্টিয়া

Location :

Kushtia
বাংলোতে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা
বাংলোতে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েরা |নয়া দিগন্ত

কুষ্টিয়ায় বিজয় দিবসের দুপুরে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের বাংলোতে আমন্ত্রণ জানিয়ে এক সাথে দুপুরের খাবার খেয়েছেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো: ইকবাল হোসেন।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামে বিজয় দিবসের খেলাধুলা অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণকালে জেলা প্রশাসক এ কথা সাংবাদিকদের জানান। জেলা প্রশাসকের এ মানবিকতা সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিজয় দিবসে বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের সাথে তাদের পছন্দের আইটেম দিয়ে দুপুরে খাবার খেয়ে বড় তৃপ্তি পেলাম। তাদের সাথে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে ফিরে গেলাম ভিন্ন এক জগতে। জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকাকালীন জনগণকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা যায় কিন্তু এ ধরণের একটি মানবিক দিন খুঁজে পাওয়া দুস্কর! তাই এ দিনটি আমার জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আমার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কয়েক দিন আগে আমাকে একটি বৃদ্ধাশ্রমের কথা বলেন। আমি একরাতে সেখানে কম্বল নিয়ে তাদের নিকট হাজির হই। তারা কম্বল পেয়ে দারুণ খুশি। তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দুপুরে আমার বাংলোতে আমন্ত্রণ জানালে তারা সাদরে গ্রহণ করেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বৃদ্ধাশ্রমের ২৫ জন আমার বাংলোতে উপস্থিত হন। আমি নিজ খরচে সাধ্যমতো তাদের আপ্যায়ন করেছি। তাদের সাথে খোলামেলা কথা বলেছি। আমার বাংলোর চারিপার্শ্বে তাদেরকে সাথে নিয়ে ঘুরিয়ে বেড়িয়েছি। একসাথে ছবি তুলেছি। তারা একটি জরাকীর্ণ ভাড়া বাড়িতে থাকেন। আমি তাদের একটি সরকারি খাস জমি দিয়ে বাড়ি করার ব্যবস্থা নেব।’

জেলা প্রশাসক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যে আমার বন্ধু সার্কেলে তাদের ব্যাপারে কথা বলেছি। তারা প্রাথমিকভাবে তাদের জন্য একটি করে চাদরের ব্যবস্থা করেছেন। আজ সেই চাদর আমি সকলের হাতে তুলে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা করে দেব ইনশাআল্লাহ। আপনারা দোয়া করবেন আশা করি এ মানবিক কাজটি সহজেই করতে পারবো।’

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমি কাজের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতে চাই। আমার নিজের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। সরকার আমাকে যা দিয়েছে সেটাই আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের। জনগণের কল্যাণে আমি নিজেকে শতভাগ বিলিয়ে দিতে চাই। কর্মজীবনের এমন কিছু কাজ আমৃত্যু সকলের মাঝে নাড়া দিয়ে যাবে এমন কাজগুলোকে আমি পছন্দ করি। আজ বিজয় দিবসে এমন একটি দৃষ্টান্তমুলক কাজের স্বাক্ষী হবো এটা কোনোদিন ভাবিনি। তবে আল্লাহপাকের ইচ্ছায় এ কাজটি করতে পেরে ভালো লাগছে।’

১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কুষ্টিয়া শহরের পুর্বমজমপুরে অবস্থিত উদয় মা ও শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের যাত্রা শুরু। বর্তমানে ২৩ জন নিঃসন্তান, বিধবা ও স্বামী পরিতক্তার স্থান হয়েছে বেসরকারি এ বৃদ্ধাশ্রমটি।

বিজয় দিবসের দিন দুপুরে ২৩ জন বৃদ্ধা এবং ওই প্রতিষ্ঠানের দু’জন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের বাংলোতে জেলা প্রশাসকের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন।

বৃদ্ধাশ্রমের মা আমেনা বেগম ও সারা বানু জানান, কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসক আমাদের নিকট আসছিলেন শীত নিবারনের কম্বল নিয়ে। আমাদের তার বাংলোতে দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের নিজ হাতে প্লেটে ভাত ও তরকারী তুলে দিয়ে আমাদের পাশে বসে এক সাথে খেয়েছেন।

তারা আরো জানান, বড় ইলিশ, মুরগির রোষ্ট, গরুর গোশত, খাসির গোশত, চিংড়ি মাছ, পোলাও, দই, কোক, মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেন। তিনি আমাদের একটি করে চাদর উপহার দেন আর আমাদের জন্য একটি স্থায়ী নিবাস তৈরীর কথা জানিয়েছেন। তিনি আন্তরিকতার সাথে আমাদের সাথে বসে খেয়েছেন এবং আমাদের বাড়ির আঙ্গিনা ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। আমরা সকলে তার ব্যবহারে খুশি হয়েছি।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এম ইফতেখার হোসেন মিঠু জানান, জেলা প্রশাসক তাদের কাছে পেয়ে আকাশচুম্বী খুশি, ঠিক তেমনিভাবে জেলা প্রশাসকের আতিথিয়তা এবং তার স্বভাবসুলভ মমতাময়ী ভালোবাসায় সকলে দারুণ খুশি।

তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসকের আতিথিয়তা এবং আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। তিনি এ বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী নিবাসের ব্যবস্থার আশ্বাস দেয়ায় আমরা খুশি এবং কৃতজ্ঞ।