বরিশালের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালনরত এক সরকারি চিকিৎসককে লাঞ্ছিত ও চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীকে প্রকাশ্যে মারধরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এক ভুক্তভোগী নারী।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বদিউজ্জামান মিন্টুর নাম উল্লেখ করে এই অভিযোগটি করেন তিনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে আশোকাঠি এলাকার বিথি আক্তার তার অসুস্থ বড় বোন মুক্তা বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ৮ নম্বর কক্ষে যান। তখন কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা: প্লাবন হালদারের সাথে দেখা করে রোগী দেখানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এ সময় হঠাৎ বদিউজ্জামান মিন্টু কয়েকজন সহযোগীসহ একই কক্ষে প্রবেশ করে তার পায়ে তিন দিন আগে সৃষ্ট একটি ক্ষতের চিকিৎসা চান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: প্লাবন হালদার বলেন, ‘আমি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পর বদিউজ্জামান মিন্টুকে টটেনাস ইনজেকশন নেয়ার পরামর্শ দিয়ে একটি ব্যবস্থাপত্র দেই। কিন্তু তিনি (মিন্টু) পরামর্শে অসন্তুষ্ট হয়ে আমার দেয়া চিকিৎসা নিয়ে কার সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ করেন। এ সময় তিনি আমার উপর বিরক্তি প্রকাশ করে ব্যবস্থাপত্রটি আমার দিকে ছুড়ে মেরে বলেন, ‘এখানে চিকিৎসাই নেব না।’
ডা: প্লাবন আরো বলেন, ‘এরপর তিনি রুম ত্যাগ করার সময় আমার উদ্দেশে কটূক্তি করলে আমি বিস্ময়ে বলে উঠি ‘এই ধরনের লোক কোথা থেকে আসে!’ তখনই তিনি (মিন্টু) ও তার সহযোগীরা ফের কক্ষে ঢুকে আমার উপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন এবং আমাকে একাধিকবার মারতে চড়াও হন।’
ডা: প্লাবন জানান, ‘এ সময় এক নারী রোগীর সাথে থাকা তার বোন বাধা দিতে গেলে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন মিন্টু।
মারধরের শিকার বিথী আক্তার বলেন, ‘বদিউজ্জামান মিন্টু যখন ডাক্তারকে মারার জন্য চড়াও হন তখন আমি বাধা দিয়ে বলি, ভাই উনি একজন সরকারি ডাক্তার। আমাদের সেবা দিচ্ছেন, তাকে মারবেন না। এ কথা শুনেই ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি (মিন্টু) প্রকাশ্যে আমার ডান গাল, কান ও মাথায় একাধিক চড়-থাপ্পড় মারেন। আমি ও আমার অসুস্থ বোনকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বাহিরে আয় তোর খবর আছে বলে হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।’
বিথি আক্তার বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতা হয়ে একজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে এমন আচরণ ও একজন নারীকে প্রকাশ্যে মারধর। এটা কল্পনাও করিনি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
অভিযোগে আরো বলা হয়, ‘ওই নেতার সাথে থাকা একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি চিকিৎসককের উদ্দেশে বলেন, ‘জানেন উনি কে? উনি বিএনপির বড় নেতা।’
এ বিষয়ে বদিউজ্জামান মিন্টুর বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার আলম বিপ্লব বলেন, ‘দল কখনো এমন আচরণ বরদাশত করে না। আমি হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। একটি তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তারপরও যা হয়েছে তা আমাদের কাম্য নয়। আমরা বসে বিষয়টি সমাধান করব।
তিনি আরো বলেন, ‘মিন্টুর সাথেও আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি, শুধু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’
গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: মনিরুজ্জামান বলেন, ‘একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সাথে রূঢ় আচরণ এবং চিকিৎসায় বাধা প্রদান করা গুরুতর অপরাধ। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি এবং পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ইউনুস মিয়া জানান, ‘একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।’