ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত কমলগঞ্জ

‘পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে পর্যটন স্পটগুলোতে আমাদের পুলিশ আছে।’

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা

Location :

Maulvibazar
ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত কমলগঞ্জ
ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত কমলগঞ্জ |নয়া দিগন্ত

ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জসহ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে যেন দেশী-বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসছেন এখানকার চায়ের রাজ্যে।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য মতে, গত চার দিনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে তিন হাজার ৯৪৬ জন পর্যটক প্রবেশ করেন। পর্যটকদের প্রবেশ ফি থেকে চার লাখ ৫০ হাজার ৫৭০ টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়। ঈদের দিন পর্যটকের সংখ্যা কম থাকলেও ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

বুধবার (১১ জুন) সরেজমিনে বিভিন্ন পর্যটন স্পটে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল বধ্যভূমি ৭১ বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, বিটিআরআই চা বাগান, চা কন্যার ভাস্কর্য, দার্জিলিং টিলা, নীলকণ্ঠ সাত রঙের চা কেবিন, হরিণছড়া গলফ মাঠ, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ও জীববৈচিত্র্য ভরপুর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এছাড়া পদ্মকন্যা নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্ণাধারা হামহাম জলপ্রপাত, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষ্মীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রাচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাঘীছড়া লেক, আলিনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপর উঁচু-নিচু পাহাড়বেষ্টিত সারিবদ্ধ পদ্মছড়া চা বাগান, শিল্পকলা সমৃদ্ধ মনিপুরী ললিত কলা অ্যাকাডেমি, প্রকৃতির পূজারি খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরী, টিপরা ও গারোসহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবন ধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ জনপদ নেমেছে পর্যটকদের ঢল।

এদিকে মৌলভীবাজার জেলায় হাওর, পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শতাধিক দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে ঘেরা চাবাগান, জীববৈচিত্র্য ও নান্দনিক প্রকৃতি দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। প্রতি বছর ঈদসহ বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা ছবি কিংবা সেলফি তুলে পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও আনন্দে মেতে উঠেছে। বিভিন্ন চায়ের দোকানে বসে প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠেছেন পর্যটকেরা। এছাড়া চাঁদের গাড়ি খ্যাত জিপ গাড়িগুলো নিয়ে চা বাগানের আঁকাবাঁকা পথে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে অনেককেই।

ঘুরতে আসা এক পর্যটক বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে অসম্ভব সুন্দর একটি স্থান কমলগঞ্জ। দেশের পর বিদেশেও এ জেলার সুনাম রয়েছে। কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়েছি। যদিও আবহাওয়া অনেক গরম তবুও ভালো লেগেছে। সুন্দর সবুজ পরিবেশ। চা বাগান বরাবরই সুন্দর হয়ে থাকে, অনেকটা সময় কেটেছে সেখানে।’

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: কাজী নাজমুল হক বলেন, ‘ঈদের টানা ছুটিতে প্রচুর পর্যটক লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। পর্যটকরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে সেজন্য বনকর্মীদের পাশাপাশি, সিএমসি’র সদস্যদের তদারকি, সিপিজি’র সদস্য ট্যুরিস্ট গাইডরা রয়েছেন। এছাড়া পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশ ও কমলগঞ্জ থানা পুলিশের একটি টিম দায়িত্ব পালন করছেন।’

এদিকে পারিবারিক সফরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান এবার মৌলভীবাজারে এসেছেন। গতকাল (১০ জুন) বিকেলে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফিনলে চা বাগান ভ্রমণ করেন তিনি। এ সময় তিনি কমলগঞ্জের সৌন্দর্যের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যাতে কেউ কোনো সমস্যায় না পড়েন। লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, বধ্যভূমি, দার্জিলিং টিলাসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোতে আমাদের টহল ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে চলমান রয়েছে।’

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো: মাহফুজুল কবীর বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি প্রতিদিন থানা পুলিশের একটি টিম কাজ করছে। এছাড়া আমি নিজেও ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করি। চা বাগানগুলো দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে সব সময়।

মৌলভীবাজার সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) আনিসুর রহমান বলেন, ‘পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ঈদের ছুটিতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে সমন্বয় করে পর্যটন স্পটগুলোতে আমাদের পুলিশ আছে।’