গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় সাভারে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি তৎকালীন ইউএনও রাহুল চন্দকে মন্ত্রণালয়ে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। সর্বশেষ তিনি ঝালকাঠির রাজাপুরে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখা থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ বারিউল করিম খান এতে স্বাক্ষর করেন।
রাহুল চন্দকে নিয়ে এদিন দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রিন্ট ভার্সনে ‘সাভারের ছাত্র হত্যা মামলার আসামি ইউএনও রাহুল এখন রাজাপুরে’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।
পরে দুপুরেই তাকে ওএসডি করে মন্ত্রণালয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘জনস্বার্থে এ বদলি অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা বুলবুল কবির নয়া দিগন্তের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি রাহুল, তিনি প্রকাশ্যে গুলির হুকুমদাতা। তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। চব্বিশের গণহত্যার আসামিকে কেন এখনো গ্রেফতার করা হচ্ছে না সে জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা রাহুল চন্দ জুলাই গণআন্দোলনের পর গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির রাজাপুরে যোগদান করেন। গত বছরে জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকাবস্থায় পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকায় অন্যতম ব্যক্তি হিসেবে জড়িত ছিলেন এই রাহুল চন্দ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সাথেও তার ছিল দহরম-মহরম সম্পর্ক।
রাহুল চন্দকে জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের জন্য মাঠে পুলিশের সাথে হেলমেট ও বুলেটপ্রুপ জ্যাকেট পরে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। ছাত্র-জনতাকে হটাতে পুলিশ সদস্যদের তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।
গত বছরে সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় গুলি চালায় পুলিশ। সে সময় ৫ আগস্ট সাভার ডেইরি ফার্ম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আলিফ আহমেদ সিয়াম (১৬) গুলিবিদ্ধ হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় সে। পরে তাকে গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে দাফন করা হয়।
ছেলে হত্যার অভিযোগে চলতি বছরের ২৩ জুন সাভার থানায় মামলা করেন সিয়ামের বাবা বুলবুল কবির। মামলায় ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০/৬০ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১ নম্বর ও ৫ নম্বর আসামি তৎকালীন সাভারের ইউএনও রাহুল চন্দ।
এদিকে, নয়া দিগন্তের রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা এনামুল হক জানান, সাভার ডেইরি ফার্ম স্কুলের ছাত্র আলিফ আহমেদ সিয়াম হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে অভিযুক্ত সাভারের তৎকালীন ইউএনও ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাহুল চন্দের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে রাজাপুরে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরের সামনের সড়কে জুলাই যোদ্ধার ব্যানারে আয়োজিত এ মানববন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সাভারে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যার অন্যতম নির্দেশদাতা ছিলেন তৎকালীন সাভারের ইউএনও রাহুল চন্দ। তার নির্দেশেই নিরীহ শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়ামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অথচ দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো রাষ্ট্রীয় পদে বহাল থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।
বক্তারা আরো বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে শুধু একটি পরিবারের সন্তান হারানো নয়; বরং এটি গোটা জাতির বিবেকের ওপর আঘাত। তাই খুনি রাহুল চন্দকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাকারিয়া সুমন, টুকু মৃধা, মুছা, মোস্তাফিজুর রহমানসহ আরো অনেকে।