পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমিরসহ অন্য কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে জেলজীবনের স্মৃতিচারণ করলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। এ সময় তিনি জামায়াত নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর ও কম্পিটিটিভ করতে হলে অন্যান্য দল লাগে। এখানে (পটুয়াখালী-১ আসন) জামায়াতের যে ক্যান্ডিডেট আছেন অ্যাডভোকেট নাজমুল সাহেব, ওনার দলের প্রেসিডেন্ট ডা. শফিক সাহেবের সাথে জেলে একত্রে সাড়ে পাঁচ মাস ছিলাম। সাড়ে পাঁচ মাস আমি ওনার পিছনে নামাজ পড়েছি। তিনি অত্যন্ত ভালো লোক, জ্ঞানী এবং ভালো ডাক্তার। তাদের নায়েবে আমির তাহের ভাই, তার সাথেও আমি নয় মাস জেলে ছিলাম। আমরা কিন্তু জেলের বন্ধু। তিনিও ডাক্তার মানুষ, অনেক জ্ঞানী লোক। ওনাদের সেক্রেটারি পরওয়ার ভাই, জেলখানায় কিন্তু আমরা পাশাপাশি রুমে ছিলাম। জামায়াতের প্রতি আমার ব্যক্তিগতভাবে যতটুকু শ্রদ্ধা আছে, তাদের সাথে আমি কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ওনাদের যে ক্যান্ডিডেট আছে আমাদের (পটুয়াখালী-১) এখানে, তিনিও আমাদের বন্ধু। তার সাথে গতকালও কথা হয়েছে। যখন নির্বাচন হবে তখন ওনারা প্রতিদ্বন্দ্বীর বদলে আমার বন্ধু হবেন বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলনের (চরমোনাই) আগের পীর ছিলেন ফজলুল করিম, আমি তার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলাম। ওনার ছেলে বর্তমান পীর রেজাউল করিম, তিনিও অত্যন্ত ভালো লোক। ওনাদের যে এখানে (পটুয়াখালী-১) ক্যান্ডিডেট মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান, তার সাথে আজ ভোরেও আমার কথা হয়েছে। সে আমার গুড ফ্রেন্ড, যদিও বয়সে সে আমার প্রায় অর্ধেক, কিন্তু উই আর ভেরি গুড ফ্রেন্ড। কাজেই আগামী নির্বাচনে আমি মনে করি ঈদের মতো আনন্দঘন পরিবেশ হবে।’
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে তার নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে আজ পর্যন্ত পটুয়াখালীতে বিএনপির যত নেতা ছিল, এরা ভার্চুয়ালি করাপশন ফ্রি-ই ছিল। এরা যতটুকু পেরেছে উন্নয়ন করেছে। সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছি আমরা ম্যাডাম খালেদা জিয়ার সময়, নাইনটি ওয়ান থেকে নাইনটি সিক্স পর্যন্ত। ওখানে উনি প্রচুর বাজেট দিয়েছিলেন। এসময় আমাদের ফাইন্যান্স মিনিস্টার ছিলেন সাইফুর রহমান সাহেব, তিনি জানতেন কোথা থেকে আনতে হয় এবং কিভাবে খরচ করতে হয়। আমরা যত দাবি করেছি, যে বাজেট চেয়েছি- মাশাআল্লাহ ম্যাডাম খালেদা জিয়া কোথাও না করেন নাই। আমরা নাইনটি ওয়ানে ইলেকশনে যাওয়ার সময় বহু জায়গায় আমরা গিয়েছি স্পিডবোটে, লঞ্চে, নৌকায়, পাঁয়ে হেটে। কিন্তু পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা এত নেটওয়ার্ক করতে পেরেছি যে, এখন আমাদের এমন কোনো ভোটকেন্দ্রই নাই- আমরা গাড়িতে যেতে না পারি। এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে বিএনপির কী প্ল্যান ছিল, কি এচিভমেন্ট ছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলো দল ক্ষমতায় এসেছে, তারমধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়। উনি যেই কাজগুলো করেছেন তা নিঃস্বার্থভাবে, উনার সময় করাপশন ছিল একেবারেই মিনিমাম, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা অত্যন্ত ভালো ছিল এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। জনগণ শান্তিতে ছিল, তাদের উপর রাজনৈতিক নির্যাতন ছিল না, চুরি-ডাকাতি কম ছিল। ম্যাডাম খালেদা জিয়াও সেরকমই কাজ করেছেন। তার সময়ে দেশে যথেষ্ট শান্তি-শৃঙ্খলা ছিল, জনগণ শান্তিতে ঘুমাতে পারতো। আর এখন ওই দুটোই হলো আমাদের মূলধন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও ম্যাডাম খালেদা জিয়ার কর্মকাণ্ড জনাব তারেক রহমান ধরে রেখেছেন।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অত্যান্ত কৃষিবান্ধব ছিলেন। ওনার সময় কৃষি বিপ্লব হয়েছে, সবুজ বিপ্লব হয়েছে এবং ওনার সময়েই আমরা প্রথম বাংলাদেশ থেকে চাল রফতানি করেছিলাম। আফ্রিকান গিনি রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জনাব আহমেদ সেকাউ টুরে- যিনি আমাদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পারসোনাল বন্ধু ছিলেন। উনি বাংলাদেশে ভিজিট করতে এসেছিলেন এবং উনিই প্রথম বাংলাদেশ থেকে চাল ইমপোর্ট করেছিলেন, অর্থাৎ আমরা রফতানি করেছিলাম। ওই ধারাবাহিকতায় এখনো চলছে, কৃষকদের জন্য সবসময় আমাদের বেশি এটেনশন থাকবে।’
নির্বাচনে নিজের প্রায়োরিটি তুলে ধরে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি যতগুলো জিনিস প্রমিজ করেছে, আমি আমার দলের মাধ্যমে এলাকায় যেসব প্রমিজ করেছি সেগুলো পূরণ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং বিগত দিনে যাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর ক্ষতিপূরণ যতটুকু সম্ভব আইনগতভাবে দেয়া।’
উল্লেখ্য, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-১ (দুমকি, পটুয়াখালী সদর ও মির্জাগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন আলতাফ হোসেন চৌধুরী। মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই তিনি বিভিন্ন এলাকায় পথসভা, গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।



