খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় সরকারি ‘গুডফক্স’ ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গরু ও ছাগলের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাণিসম্পদ বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় দফতর তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা: মো: সাহাব উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন একটি দল উপজেলার ১ নম্বর রামগড় ইউনিয়নের লামকুপাড়া গ্রামে গিয়ে মৃত ও আক্রান্ত পশুর নমুনা সংগ্রহ করে।
তদন্ত দলে আরো ছিলেন বিভাগীয় ভেটেরিনারি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: জপু চক্রবর্তী, ডা: তাহমিনা আক্তার, খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মনিরুল ইসলাম, রামগড় উপজেলা প্রাণিসম্পদ (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মো: মোস্তফা কামাল এবং উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা: মো: রুবায়েতুল ইসলাম।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত ১৫ এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খামারিদের গরু ও ছাগলকে এই ‘গুডফক্স' ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। কিন্তু টিকা নেয়ার দুই দিনের মধ্যেই পশুগুলোর শরীরে জ্বর ওঠা, ত্বকে ফুসকুড়ি, ঘা ও ক্ষতের মতো লক্ষণ দেখা যায়। এরপর থেকেই পশুগুলো একের পর এক মারা যেতে থাকে। এখনো পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশের বেশি গরু-ছাগলের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় খামারিরা। এছাড়া আরো বহু পশু অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের কারণে পশুমৃত্যুর অভিযোগ এনে গত ২৯ এপ্রিল ক্ষুব্ধ খামারিরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে মৃত ছাগল নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। তারা ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবিতে স্লোগান দেন।
এলাকার খামারিরা অভিযোগ করেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি সার্জন ডা: রুবায়েতুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তার দুই সহকারী জামাল উদ্দিন ও রমজান এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন। তাদের আশঙ্কা, হয়তো ভ্যাকসিনের মানের ত্রুটি ছিল বা একই ব্যাচের টিকা একত্রে প্রয়োগ করায় এমন বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
লামকুপাড়ার খামারি লুৎফর রহমান বলেন, ‘ভ্যাকসিন দেয়ার পর আমার খামারে ২০টি ছাগল আর দুটি গরু মারা গেছে। ঈদের কোরবানির জন্য অনেকদিন ধরে গরু লালন-পালন করছিলাম। এখন একেবারে পথে বসেছি। এই অবস্থায় সরকারি সহায়তা আর ক্ষতিপূরণ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
এদিকে তদন্ত কমিটির সদস্য ডা: জপু চক্রবর্তী বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে। আমরা মৃত এবং অসুস্থ পশুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। রিপোর্ট হাতে এলে বোঝা যাবে কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে।’
তদন্ত দলের প্রধান ডা: সাহাব উদ্দিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সাথে কথা বলে, ঘটনাস্থল ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ল্যাব রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই বিভাগীয় দফতর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। আক্রান্ত পশুগুলোর চিকিৎসা চললেও তারা এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয়।
এদিকে প্রাণিসম্পদ দফতরের তদারকি ঘাটতি এবং ভ্যাকসিনের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা। তারা বলছেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। বহু খামারি এখন ভ্যাকসিন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।