রাজশাহীতে মতবিনিময় সভায় বক্তারা

গ্রাম আদালত কার্যকর হলে কমবে মামলা জট

গ্রাম আদালত কার্যকরভাবে পরিচালিত হলে উচ্চ আদালতের ওপর থেকে মামলা জট কমবে এবং বিচার প্রার্থীরা স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে সঠিক বিচার পেতে সক্ষম হবেন।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
রাজশাহীতে মতবিনিময় সভায় বক্তারা
রাজশাহীতে মতবিনিময় সভায় বক্তারা |নয়া দিগন্ত

রাজশাহীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেছেন, গ্রাম আদালত কার্যকরভাবে পরিচালিত হলে উচ্চ আদালতের ওপর থেকে মামলা জট কমবে এবং বিচার প্রার্থীরা স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে সঠিক বিচার পেতে সক্ষম হবেন। প্রচলিত আদালতে একটি মামলা দায়েরের পর বছরের পর বছর কেটে গেলেও চূড়ান্ত রায় পেতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে বিচারপ্রার্থীদের সময়, অর্থ, শ্রম- সবকিছুই অপচয় হয়। কিন্তু গ্রাম আদালত এই সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যেই অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। ফলে দীর্ঘসূত্রিতা ও অযথা ভোগান্তি থেকে গ্রামের প্রান্তিক জনগণ মুক্তি পাবেন। এক্ষেত্রে গ্রাম আদালতকে আরো জনপ্রিয় করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের নিয়ে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব মতামত তুলে ধরেন। সভাটি আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প।

সভায় জানানো হয়, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলার ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে কাজ চলমান। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৬ হাজার ১৬৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯৬৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। নারী মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৬৫১টি। এই প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে সাত কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৩ টাকা এবং প্রায় এক হাজার ৫৭ শতক জমি পুনরুদ্ধার করা হয়। এই জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি ২ লাখ টাকা। এই আদালতে অনধিক তিন লাখ টাকা মূল্যমানের ফৌজদারী ও দেওয়ানী বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে।

এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, ‘দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে কম সময় ও কম খরচে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে, সে জন্য গ্রাম আদালতের বিকল্প নেই। গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণা এ বিষয়ে জনগণকে আরো সচেতন ও উৎসাহিত করবে।’

তিনি আরো বলেন, গ্রাম আদালতকে আরো শক্তিশালী করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। গ্রাম আদালত সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলে বিচার প্রক্রিয়া সহজ হবে, মামলা জট কমবে এবং জনগণ দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে— যা সরকারের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের রাজশাহীর উপ-পরিচালক মো: জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোটখাটো অপরাধ বা বিরোধের ঘটনাই বেশি ঘটে। এগুলো গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত হলেও সচেতনতার অভাবে অনেকে থানা বা জেলা আদালতে দৌড়ান, এতে সময় ও অর্থ দুই-ই অপচয় হয়। গণমাধ্যম এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি আরো জানান, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৬ হাজার ১৬৬টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯৬৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। নারী মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৬৫১টি। এই প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে সাত কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৩ টাকা এবং প্রায় এক হাজার ৫৭ শতক জমি উদ্ধার করা হয়। এতে প্রমাণ হয়েছে যে প্রান্তিক নারীরা গ্রাম আদালতের সুবিধা থেকে বেশি উপকৃত হচ্ছে।

গ্রাম আদালত প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক মো: লুৎফর রহমান বলেন, গ্রাম আদালতের সেবা সাধারণ মানুষের কাছে আর সহজভাবে তুলে ধরতে হলে গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রয়োজন। গণমাধ্যম যদি ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করে, তাহলে গ্রাম আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

এসময় গ্রাম আদালতের কার্যক্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্তী। গ্রাম আদালত ব্যবস্থার আইনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রকল্পের লিগ্যাল এনালিস্ট ব্যারিস্টার মশিউর রহমান চৌধুরী।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইউনিয়নের এখতিয়ারাধীন এলাকায় কতিপয় দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিরোধের সহজে নিষ্পত্তি করার জন্য যে আদালত গঠন হয় তাকে গ্রাম আদালত বলে। এই আদালতের প্যানেল ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোট পাঁচজন সদস্য নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে। এই মামলার শুনানির কার্যক্রম শুরু হবার অনধিক ৯০ দিনের মধ্যেই গ্রাম আদালতে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে তিন লাখ টাকার নিচে মামলা গ্রাম আদালতে নিষ্পত্তি করা যাবে।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন- ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রজেক্ট কো-অডিনেটর মারুফ আহমেদ।

বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালত একটি কার্যকর ও জনগণবান্ধব ব্যবস্থা, যা প্রচলিত আদালতের ওপর চাপ কমিয়ে দেশের বিচারব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করতে পারে। জনসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রচারের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাকে সারাদেশে আরো জনপ্রিয় করা সম্ভব।