‘নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল হবে জানিয়ে বাংলাদেশের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পেছনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি পুলিশ। তাই নির্বাচনকালীন পুলিশের আচরণ হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ ও পেশাদার। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্য নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে কেবল আইন ও দেশের প্রতি।’
রাজশাহীতে বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের নিয়ে শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে এক বিশেষ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) ও রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের যৌথ আয়োজনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান। সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনই নির্বাচনের মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পেছনে সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি হলো পুলিশ। তাই নির্বাচনকালীন পুলিশের আচরণ হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, ন্যায়নিষ্ঠ ও পেশাদার। কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির প্রতি আনুগত্য নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে কেবল আইন ও দেশের প্রতি।’
আইজিপি আরো বলেন, ‘যে সরকারই আসুক না কেন, পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে আইন অনুযায়ী কাজ করা। কেউ যেন আগাম ধারণা করে বা কাউকে খুশি করার জন্য দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত না হয়। একজন পুলিশ সদস্য হয়তো কাউকে ফেভার করলে তা হয়তো প্রকাশ পাবে না, কিন্তু একদিন নিজের বিবেকের কাছেই তাকে জবাব দিতে হবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘পুলিশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো ইন্টেগ্রিটি, সততা ও পেশাগত দায়িত্ববোধ।’
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাজ কঠিন। কখনো আসামি ধরতে গেলে বাধা আসে, হুমকি আসে, এমনকি আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়। তবুও দায়িত্ব থেকে পিছু হটবেন না।’
পুলিশের ঐতিহ্য ও ত্যাগের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘এই পুলিশ বাহিনী একদিনে গড়ে ওঠেনি। দেড়শ বছরের ঐতিহ্য, ত্যাগ ও নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান আজকের অবস্থানে এসেছে। ব্রিটিশ আমলে পুলিশ যেমন জীবনবাজি রেখে দায়িত্ব পালন করত, আজও সেই ধারাবাহিকতায় দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘৫ আগস্টে পুলিশ কঠিন এক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে গিয়েছিলো। ধাপে ধাপে সেই পরিস্থিতি অতিক্রম করে আজকের অবস্থানে এসেছে। যদিও এখনো কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে, তবুও একসময় সমালোচিত সেই পুলিশ বাহিনী আজ নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।’
আইজিপি বলেন, ‘সমাজে পুলিশের প্রতি অনেক প্রত্যাশা রয়েছে, সমালোচনাও আছে। কিন্তু তারপরও পুলিশ দায়িত্ব থেকে সরে যায়নি, বসে থাকেনি এটাই পুলিশের শক্তি।’
তিনি জানান, পেশাদার ভূমিকার কারণে অনেক স্থানে পুলিশ এসল্টের শিকার হয়েছে। পুলিশ এসল্টের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশা দিয়েছেন যাতে দ্রুত এসব মামলার বিচার সম্পন্ন করা যায়। তাহলে সমাজে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আগামী নির্বাচন পুলিশের জন্য একটি বড় পরীক্ষা এবং একই সাথে সুযোগও। অতীতের ভুল সংশোধন করে সততা, ন্যায় ও পেশাদারিত্বের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে তিনি বিভিন্ন পুলিশ সদস্যদের কল্যাণ, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেন এবং তা সমাধানে আশ্বাস প্রদান করেন।
সভায় রাজশাহী রেঞ্জ, আরএমপি এবং রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত পুলিশের সকল ইউনিটের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।



