বগুড়ায় সরকারের নির্ধারণ করে দেয়া দামে এবারো কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়নি। এর ফলে এর হকদার মাদরাসা, মসজিদ, গরীব-দুস্থরা এবারো বঞ্চিত হলো।
বগুড়া সদরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আওয়ামী সিন্ডিকেটের বিদায়ের পর এবার নতুন সিন্ডিকেট চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বগুড়া শহরের কিছু স্থানে চামড়া কেনাবেচা হলেও গ্রামাঞ্চলের অনেক স্থানে চামড়ার ক্রেতা ছিল না। গরুর চামড়ার কিছুটা চাহিদা থাকলেও সবচেয়ে খারাপ অবস্থা খাসি ও ভেড়ার চামড়ার। খাসির চামড়া কিছু স্থানে সর্বনিম্ন ৫ টাকায় বিক্রি হলেও অনেক জায়গায় এসব চামড়া কেউ কিনছেই না।
ঈদের দিন দুপুর ১২টার দিকে শহরের ইয়াকুবিয়া মোড়ে চামড়া ব্যবসায়ী রনি জানান, তিনি গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় কিনছেন। তবে খাসি বা ছাগলের চামড়া কেউ নিতে চাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
গাবতলীর লাঠিগঞ্জ গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী সায়েদ আলী গ্রাম থেকে বেশ কয়েকটি গরু ও ছাগলের চামড়া ভ্যানে করে বগুড়া শহরে নিয়ে আসেন। দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘কেউ দামও বলে না। ছাগলের চামড়া তো কেউ নিতেই চায় না।’
বিকেলের দিকে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নিয়ে বসে আছেন, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারছেন না।
বগুড়া সদরের ঘোলাগাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদ প্রামাণিক বলেন, ‘আমার ৯৬ হাজার টাকার গরুর চামড়া এখনো বাড়িতেই পড়ে আছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ কিনতে আসেনি। শুধু আমার না, গ্রামে অসংখ্য চামড়া অবিক্রিত।”
জানা গেছে, গরুর চামড়া আকারভেদে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও বেশির ভাগ চামড়া ৫০০ থেকে ৭০০ টাকাতেই কেনাবেচা হয়। খাসির চামড়া সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দাম ১০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন ব্যয়, লবণ, মজুদ সুবিধার ঘাটতি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ী জুয়েল রানা বলেন, ‘চামড়া সংরক্ষণের খরচ, পরিবহন—সব খরচ মিলিয়ে ব্যবসা আর টিকছে না। বছরের এই একটা মৌসুমে ব্যবসা করি, এবার লাভ তো করতেই পারিনি, উল্টো ক্ষতিতে পড়েছি।’