সাভারে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা, নেপথ্যে কী?

‘সেই দিন শুনলাম ওনার চার কোটি টাকার জায়গায় সম্পত্তির জন্য এই অবস্থা। ওনার শেষ ইচ্ছে ছিলো, সব সম্পত্তি এতিমখানা-মাদরাসায় দান করবেন তা আর হলো কই?’

আমান উল্লাহ পাটওয়ারী, সাভার (ঢাকা)

Location :

Savar
সাভারে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা, নেপথ্যে কী?
সাভারে ঘুমন্ত ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা, নেপথ্যে কী? |নয়া দিগন্ত

সাভার পৌর এলাকার পশ্চিম রাজাশন (মন্ডলপাড়া) মো: হাসেম মন্ডল (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে রাতে নিজ শয়ন কক্ষে ঘুমন্তবস্থায় গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে- নিজের সম্পত্তি এতিমখানা ও মাদরাসায় দান করা ইচ্ছে ছিলো নিহত ব্যক্তির। তাই ‘সম্পত্তি দান’ থেকে বিরত রাখতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।

জানা যায়, বুধবার (১৩ আগস্ট) ভোরে হাসপাতাল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

নিহত মো: হাসেম মন্ডল স্থানীয় মরহুম হালিম মন্ডলের ছেলে। তিনি গরু ও ভেড়া লালন-পালন করতেন। এর আগে ৭/৮ বছর প্রবাসে ছিলেন।

হাসেম ব্যক্তি জীবনে বিবাহ করলেও কিছু দিন সংসার করার পর তার স্ত্রী চলে যায়। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন এবং পৈত্রিক ভাবে বহু সম্পদের মালিক ছিলেন। এমনকি কোনো সম্পত্তি বিক্রি করেননি।

ভোরে হাসেমের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নজনকে বিভিন্ন লেখা-লেখি করতে দেখা যায়।

সজল হোসাইন শান্ত নামে একজন লেখেন- ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরির আঘাতে পরকালে চলে গেলেন। এই দেশে বিচার মিলবে না জানি, সেই দিন শুনলাম ওনার চার কোটি টাকার জায়গায় সম্পত্তির জন্য এই অবস্থা। ওনার শেষ ইচ্ছে ছিলো, সব সম্পত্তি এতিমখানা-মাদরাসায় দান করবেন তা আর হলো কই?

তিনি আরো লেখেন, আপনার মাগফিরাত এর জন্য অনেক অনেক দোয়া করি। আল্লাহ তোমার এই বান্দার শেষ ইচ্ছে কবুল হয়নি। এই উছিলায় তাকে বেহেশত নসিব করুন।

এ ডি রুহুল খান লেখেন ভাই খুব ভাল মানুষ ছিলো। আল্লাহ ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমিন

এদিকে নিহত হাসেম মন্ডলের ছোট ভাই তৌহিদ ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত এবং তার ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তিনি তৌহিদ পেশায় কসাইয়ের কাজ করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (৬ আগস্ট) দিবাগত রাতে হাসেম মন্ডল তার সহপাঠিদের নিয়ে রাতে একসাথে আড্ডা মারার সময় তারই আপন ছোট ভাই তৌহিদ বড় ভাই হাসেমকে জুঁস খাওয়ান। পরে হাসেম ঘুমিয়ে পড়লে ছোট ভাই তৌহিদকে তার বন্ধুরা বাসার বাহির থেকে তালা মেরে চলে যাইতে বলেন।

ছোট ভাই তৌহিদ সেই মোতাবেক ঘরের বাহির থেকে তালা মেরে তার কাছেই চাবি রেখে দেন। সকালে হাসেমের এক বন্ধু বাসার কাছে এসে হাসেমকে ডাকডাকি করলে কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা খোলা দেখতে পান। পরে হাসেমকে রক্তাক্ত গলা কাটা অবস্থায় দেখে চিৎকার দিলে আশপাশের প্রতিবেশীরা হাসেমকে মুমূর্ষবস্থায় উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করলে ভোরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান।

এদিকে এ ঘটনার পর নিহত হাসেমের মা এক সপ্তাহ আগে বাদি হয়ে থানায় মামলা করলেও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে না পারায় জনমনে নানা প্রশ্ন জন্ম দিচ্ছে।

সাভার মডেল থানা ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (এসআই) অটল বিহারী বিশ্বাস নয়া দিগন্তকে জানান, হাসেমের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। এ ঘটনায় কোনো আসামি আটক বা গ্রেফতার হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।