১৪ বছর শয্যাশায়ী পারুলের স্বপ্ন-ফিরে পেতে স্বাভাবিক জীবন

আমি আবার সুস্থ হয়ে দাঁড়াতে চাই, আমার ছেলে-মেয়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। বিত্তবান ও সরকারের কাছে সাহায্য চাই যেন চিকিৎসা পেয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি।

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)

Location :

Mirsharai
পারুল আক্তার
পারুল আক্তার |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পূর্ব অলিনগর (বিশ্বটিলা) গ্রামের পারুল আক্তারের জীবন এক দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রামের নাম। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি গত ১৪ বছর ধরে বিছানায় শয্যাশায়ী। ২০১৩ সালে হঠাৎ হাত-পায়ে ব্যথা শুরু হলে ধীরে ধীরে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বাঁকা হয়ে যায়। সেই থেকে তিনি আর দাঁড়াতে বা বসতে পারেন না। আজও তিনি শুধুমাত্র বিছানায় শুয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পারুল আক্তার কিছুটা হাত নড়াতে পারেন, তবে হাত ও আঙুল বেঁকে গেছে। পায়ে কোনো কার্যক্ষমতা নেই। তবুও তার চোখে সুস্থ হওয়ার স্বপ্ন-একদিন যেন হাঁটতে পারেন, ফিরতে পারেন স্বাভাবিক জীবনে।

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে স্ত্রী ও দুই সন্তানের কোনো খোঁজখবর রাখেন না পারুলের স্বামী শহীদুল। ছোটবেলায় সন্তানেরা বাবার স্নেহ পাননি, আর মায়ের অসুস্থতার কারণে আদরও পাননি। বর্তমানে তার কন্যাসন্তানের বয়স ১৮ বছর-বিয়ের উপযুক্ত হলেও পরিবারে নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার ছায়া। ছেলে কর্মক্ষম হলেও মায়ের চিকিৎসার খরচের ধারদেনা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন।

পারুলের অসুস্থতার শুরু থেকেই পাশে রয়েছেন তার একমাত্র বৃদ্ধা মা শরিফা খাতুন। গত ১৪ বছর ধরে তিনিই মেয়ে ও নাতি-নাতনির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। দিনমজুরি ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোভাবে সংসার চালিয়েছেন। কিন্তু বয়স বাড়ায় সেই সামর্থ্যও দিন দিন ক্ষীণ হয়ে আসছে।

জানা গেছে, পারুল আক্তার অসুস্থ হওয়ার আগে স্থানীয় এক চেয়ারম্যানের বাসায় কাজ করতেন। সেখানেই প্রথমে তার হাত ব্যথা শুরু হয়, পরে ধীরে ধীরে অসুস্থতা বাড়তে থাকে। সেই অসুস্থতা নিয়েই তিনি আজ ১৪ বছর ধরে শয্যাশায়ী।

অসুস্থ পারুল বলেন, ‘অনেক ডাক্তারের ওষুধ খেয়েছি, ভালো হয়নি। আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে গেছি। আমি আবার সুস্থ হয়ে দাঁড়াতে চাই, আমার ছেলে-মেয়ের মুখে হাসি দেখতে চাই। বিত্তবান ও সরকারের কাছে সাহায্য চাই যেন চিকিৎসা পেয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারি।’

বৃদ্ধ মা শরিফা খাতুন বলেন, ‘হাত দিয়ে কিছু খেতে পারে না। এত বছর ধরে খাইয়ে দিতে হয়। প্রচণ্ড ব্যথা করে। যতটুকু সম্ভব চিকিৎসা করেছি, এখন আর টাকার অভাবে করতে পারছি না। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা মাঝেমধ্যে কিছু সহযোগিতা করেন, কিন্তু বড় কোনো অনুদান চিকিৎসার জন্য পাইনি।’

স্থানীয় বাসিন্দা নাছির উদ্দীন বলেন, ‘পারুল একজন স্বামী পরিত্যক্তা নারী। দীর্ঘদিন অসুস্থ, টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারেননি। তার পা পুরোপুরি অচল, চলাফেরা করতে পারেন না। আমরা চাই তিনি যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পান।’

প্রতিবেশী সাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘কিছুদিন আগে অন্যজনের মাধ্যমে পারুলের অসুস্থতার বিষয়ে জানতে পারি। পরে কয়েকজনের সহযোগিতায় কিছু সাহায্য করি। তার পরিবারের অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। ছেলে কোনোভাবে কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। অনেক টাকা ঋণ রয়েছে।’

মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাবরিনা লিনা বলেন, ‘আমাদের উপজেলা রোগী কল্যাণ সমিতি আছে। পারুলের জন্য সেখান থেকে আমরা ওষুধের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তার চিকিৎসার জন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করতে পারবো।’