মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের ‘কল ব্যাক নোটিশ’

আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘কল ব্যাক নোটিশ’ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখা।

Location :

Shibganj
মাহমুদুর রহমান মান্না
মাহমুদুর রহমান মান্না |সংগৃহীত

বগুড়া অফিস ও শিবগঞ্জ (বগুড়া) সংবাদদাতা

আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরীকে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা পরিশোধে ‘কল ব্যাক নোটিশ’ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখা।

নোটিশে আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে। একইসাথে বকেয়া পরিশোধ না হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।

বুধবার ইসলামী ব্যাংক বগুড়ার শাখা প্রধান মো: তৌহিদ রেজার স্বাক্ষরে এ নোটিশ ইস্যু করা হয়।

নোটিশে বলা হয়েছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করা না হলে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২২ কোটি টাকার বিনিয়োগ অনুমোদন করা হলেও মুনাফা, চার্জ ও জরিমানা পরিশোধ না করায় বর্তমানে মোট বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।

নোটিশে আরো বলা হয়, আফাকু কোল্ড স্টোরেজ একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও মান্না ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করেননি। বারবার নোটিশ দেয়া হলেও টাকা পরিশোধের কোনো চেষ্টাও করেননি তিনি।

তৌহিদ রেজা স্বাক্ষরিত নোটিশে এরপর বলা হয়, ‘মঞ্জুরিপত্রের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি ডিলে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তির টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও আপনাকে/আপনাদেরকে মৌখিকভাবে, ব্যক্তিগতভাবে ও মোবাইল ফোনে বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও আপনি/আপনারা তা পরিশোধ করেননি। ইতোপূর্বে আপনাকে লিখিতভাবে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবুও আপনারা বিনিয়োগের দায় পরিশোধ করেননি। আপনার/আপনাদের লেনদেনের পরিস্থিতি দেখে আমাদের কাছে অনুমিত হচ্ছে যে আপনার/আপনাদের সাথে আমাদের আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং আপনাদের সব দায়-দেনা পরিশোধ করার জন্য কল ব্যাক নোটিশ দেয়া হলো। অতএব, আগামী ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে বিনিয়োগের সমুদয় দায় ৩৮৪.৭৬ মিলিয়ন টাকা পরিশোধ করে হিসাবসমূহ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে।’

বগুড়া শাখা প্রধান তৌহিদ রেজা বলেছেন, ‘আফাকুর চেয়ারম্যান মাহামুদুর রহমান মান্না ও তার পার্টনার শাহজাহান চৌধুরী নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করেন না। ফলে ১৫ বছরে লোনের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও তিনি চুক্তি মতো টাকা দিচ্ছেন না। তাই টাকা পরিশোধে তাকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। লোন পরিশোধ না করলে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

এদিকে, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর তৃতীয় অধ্যায় (নির্বাচন) ১২ (১) (ঠ) ধারা অনুসারে কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণখেলাপি হলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নার সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তার প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ আছে; এটা ঠিক। তবে চিঠির বিষয়ে তিনি এখনো কিছু জানেন না। তিনি কোনো চিঠি পানওনি।’

মান্না বলেন, ‘ঋণটির পুনঃতফসিল প্রক্রিয়াধীন। কোনো নোটিশ ইস্যু হলে তো আমার কাছে আসবে! আমি এখনো জানি না।’

আওয়ামী লীগ নেতার সাথে ব্যবসা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার এমডি আওয়ামী লীগ করে, সেটা ঠিক আছে। কারণ কোম্পানিটা হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ বছর আগে। তখন তো আমিও আওয়ামী লীগ করতাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ কথা ঠিক যে গত ১০ বছরে এই কোম্পানির কাছে আমি যেতেই পারিনি। কারণ, ওই ছেলে সব নিয়ন্ত্রণ করতো। আমাকে সাপোর্ট দেয়নি; কিন্তু টাকা-পয়সা নিয়ে সব আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। এটাও ঠিক যে সে আমেরিকা পালিয়ে গেছে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই নিউজগুলো এখন করাচ্ছে ঠিক ভোটের আগে। এতদিন না!’