দোয়ারাবাজারে রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ, কাজ বন্ধ করে দিল জনতা

একাধিকবার অভিযোগের পরেও অনিয়ম বন্ধ না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয়রা। পরে ঠিকাদার এসে পুনরায় কাজ চালু করলেও বন্ধ হয়নি অনিয়ম।

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা

Location :

Sunamganj
রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
রাস্তার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ |নয়া দিগন্ত

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ব্রিটিশ-বাংলাবাজার রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের কাজে এমন অনিয়মের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। একাধিকবার অভিযোগের পরেও অনিয়ম বন্ধ না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেয় স্থানীয়রা। পরে ঠিকাদার এসে পুনরায় কাজ চালু করলেও বন্ধ হয়নি অনিয়ম।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দোয়ারাবাজারে দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরুর পরও একই ধরনের অনিয়ম চলতে থাকায় বাধ্য হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাস্তার কাজের অনিয়মের ছবি ও ভিডিও আপলোড করে প্রতিবাদ জানায় স্থানীয়রা।

জানা যায়, জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের বাংলাবাজার থেকে পাইকপাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজ শুরু করে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ। ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলা এলজিইডি অফিসের তত্ত্বাবধানে এ কাজ শুরু হয়। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার পরপরই অভিযোগ উঠে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির।

এর আগে শুক্রবার স্থানীয়রা একাধিকবার অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করলেও স্থানীয় এলজিইডি কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি আমলে নেয়নি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদ হতে ব্রিটিশ-পাইকপাড়া পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নিয়ম অনুযায়ী রাস্তা সংস্কার কাজে খানা-খন্দকগুলোতে রড, বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ডালাই করার কথা থাকলেও বাস্তবে তার উল্টো হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

পরে ঠিকাদার রাস্তাটির সংস্কার কাজে রডবিহীন ঢালাই, সিমেন্টের পরিমাণ কম, অপরিচ্ছন্ন ও মাটিযুক্ত বালু ব্যবহারসহ খানা-খন্দকগুলোতে বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে ভরাট করে কাজে অনিয়ম করছে এমন তথ্য-প্রমাণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে স্থানীয়রা এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পর ঠিকাদার ফখরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে পুনরায় কাজ শুরু করে।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সবজির ভাণ্ডার খ্যাত উপজেলার সর্ববৃহৎ বাংলাবাজার ও মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ নম্বর সেক্টর বাঁশতলা পর্যটন এলাকায় যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। দুই বাজেটে ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাবাজার-ব্রিটিশ সড়কের রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। এ রাস্তা সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাবাজার ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘ এক যুগের দুর্ভোগের সমাপ্তি হওয়ার কথা। কিন্তু এ কাজে ব্যাপকভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

তারা বলেন, এভাবে অনিয়মের মাধ্যমে নিম্নমানের কাজ হলে শুধু সরকারি অর্থ নষ্ট হবে কিন্তু বিনিময়ে মানুষের কোনো উপকার হবে না। একইসাথে ভবিষ্যতে এ রাস্তায় এলাকাবাসীর চলাচলে আরো দুর্ভোগ নেমে আসার আশঙ্কা করছেন তারা।

সালেহ আহমদ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘ব্রিটিশ-বাংলাবাজার সড়কের পাইকপাড়া এলাকায় সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতি শুরু হয়। একাধিকবার তাদের বলা হলেও আমলে নেয়নি। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও আপলোড করেছি, তাতে অনিয়মের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে।’

তিনি আরো জানান, ‘কাজে অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ঠিকাদার ও তার লোকজন আমাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছে।’

স্থানীয়রা আরো জানায়, ঠিকাদারের ক্ষমতার ভয়ে কেউ অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায় না। যারা এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছে তাদের উপর ঠিকাদারের লোকজন মারমুখী হন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ জানান, ‘স্থানীয়দের অভিযোগে ঘটনাস্থলে উপজেলা এলজিইডি অফিসের সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার জসিমকে পাঠানো হয়েছে।’