আশুগঞ্জে ট্রেনের বগি বিচ্ছিন্ন : সেতু ও ঝোঁপের ধারে আটকে দুর্ভোগে শত শত যাত্রী

সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিটে দিকে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে এ ঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Location :

Ashuganj
ঝোঁপের মাঝে আটকে থাকা বিচ্ছিন্ন বগি
ঝোঁপের মাঝে আটকে থাকা বিচ্ছিন্ন বগি |নয়া দিগন্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চলন্ত অবস্থায় ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের কাপলিং হুক ভেঙে ছয়টি বগি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় এবং শতশত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন।

সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিটে দিকে আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের অদূরে এ ঘটনা ঘটে।

স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন ছেড়ে যাওয়া মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি আশুগঞ্জে প্রবেশের মুহূর্তে ‘ট’ ও ‘ঠ’ বগির মাঝখানে কাপলিং হুক ভেঙে ১১টি বগি আলাদা হয়ে যায়। এ সময় বিচ্ছিন্ন বগিগুলো ঝোঁপের ধারে আটকে পড়ে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

কুমিল্লার যাত্রী সুরেন্দ্র দাস বলেন, ‘হঠাৎ ট্রেন থেমে গেলে সবাই ভয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। মনে হয়েছিল বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

আখাউড়ার যাত্রী ফাহিমা জানান, ‘ঝোঁপের পাশে অন্ধকারে আটকে থেকে আমরা আতঙ্কে ছিলাম। কেউ কেউ শিশুদের কোলে নিয়ে কাঁদছিলেন।’

ঘটনার পর সিলেট থেকে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে আটকে পড়ে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কর্ণফুলি এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন এসে ঝোঁপে আটকে থাকা ছয়টি বগিকে ঠেলে আশুগঞ্জ স্টেশনে নিয়ে আসে। তবে সেতুর ওপর ইঞ্জিন বিকল হয়ে থাকা বগিগুলো তখনো উদ্ধার হয়নি। এতে আশুগঞ্জ স্টেশন চত্বরে শতশত যাত্রী ভোগান্তিতে অপেক্ষা করতে থাকেন।

অপরদিকে ইঞ্জিনসহ বাকি পাঁচটি বগি আশুগঞ্জ স্টেশনে এসে নির্ধারিত যাত্রাবিরতির পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে ভৈরব রেলসেতুর ওপর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীরা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে সেতুর ওপর আটকে থাকা বগি থেকে নেমে আসেন।

শারমিন নামের এক নারী যাত্রী বলেন, ‘সেতুর ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। নামার সময় ভয়ে বুক কাঁপছিল। বৃদ্ধ আর ছোট বাচ্চাদের খুব কষ্ট হয়েছে।’

দীর্ঘ সময় আটকে থাকায় যাত্রীদের মধ্যে খাবার-পানির সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। আশুগঞ্জ রেলস্টেশন চত্বরে জটলা পাকিয়ে থাকা শতশত যাত্রী ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় বসে ছিলেন।

এই পরিস্থিতিতে আশুগঞ্জ স্টেশনকে ডি-গ্রেড থেকে বি-গ্রেডে উন্নীতকরণের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংগঠন ‘ঐক্যবদ্ধ আশুগঞ্জ’ মানবিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসে। তারা আটকেপড়া যাত্রীদের পানি, খাবার ও চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করে।

সংগঠনের উপদেষ্টা হাসান ইমরান বলেন, ‘অচলাবস্থায় সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে রাখা যায় না। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’

আশুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার মো: সাকির জাহান বলেন, ‘দুটি বগির কাপলিং হুক ভেঙে ছয়টি বগি আলাদা হয়ে যায়। পরে ইঞ্জিন সেতুর ওপর বিকল হয়ে যাওয়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।’

ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) কে এম শাহীনূর ইসলাম জানান, এ ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ হয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, কী কারণে কাপলিং হুক ভেঙে বগি বিচ্ছিন্ন হলো তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তদন্ত শুরু হয়েছে।