সুনামগঞ্জে ‘গণমাধ্যমের অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন’ বিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক এতে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের আয়োজনে, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে অপসাংবাদিকতার কারণে মূলধারার সাংবাদিকতা দিন দিন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে লক্ষ করে দেখা যায় যে কেউ ফেইসবুকের মাধ্যমে বা আইন না জেনেই যা ইচ্ছা তাই প্রচার করে যাচ্ছে, যা মূল ধারার সাংবাদিকতার ওপর বিশাল একটি প্রভাব পড়ছে। ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলে সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে যা নীতিমালা বহির্ভূত। এসব কারণে মূল ধারার সাংবাদিকদের অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এসব অপ-সাংবাদিকতা থেকে সাংবাদিক সমাজকে পরিত্রাণ পেতে হলে মূলধারার সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রয়োজন।’
নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানতে হবে মন্তব্য করে বলেন, ‘জীবনভর সংবাদপত্রে কাজ করেও শেষ জীবনে নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যহাতে ফিরতে হয়। এমনকি কারো কারো বেলায় দেখা যায় কোনো নিয়োগ পত্রই নেই এবং কেউ কেউ বিনা বেতনে কাজ করে নামকাওয়াস্তে একটি কার্ড নিয়েই জীবন পার করে দেন। দেশে এমন পরিস্থিতি থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষার খুব দরকার।’
প্রেস কাউন্সিল এ ব্যাপারে সরকারকে সাংবাদিকদের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে। আশা করি এই প্রস্তাবনা শিগগিরই প্রণীত হবে।
সাংবাদিকদের, সংবাদপত্র মালিকদের এবং সম্পাদকদের বিভিন্ন সংগঠন থাকলেও তাদের সাধারণ সাংবাদিকদের জন্য তেমন কোনো আর্থিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে দেখা যায় না। দেশে প্রায় তিন হাজার আইন রয়েছে। বহুসংখ্যক আদালত রয়েছে। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের জন্য যোগ্য ও দক্ষ মানুষের খুব অভাব রয়েছে।
আগে ছিল রেডিও, টেলিভিন, এখন কিন্তু মোবাইলে দ্রুতই আমরা খবর জেনে নেই। কপি পেস্ট করা যাবে না, নিজের দায়িত্ব নিয়েই সত্য তথ্যে নিউজ করতে হবে।
বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হলে শিকারীর মতো শিকার ধরলে হবে না। যা সত্য তাই প্রচার করতে হবে। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে বিকৃত সংবাদ কখনোই প্রচার করা যাবে না। এগুলো করলেই কখনোই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ হয়নি। সাংবাদিকতা দলীয় রাজনীতির উদ্ধে উঠে করতে হবে। একজন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকের অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। তিনি দেশ-জাতীর কল্যাণে কাজ করেন।
সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সুপারিন্টেন্ডেন্ট মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সচিব (উপ-সচিব) মো: আব্দুস সবুর, সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাক (সার্বিক) সমর কুমার পাল, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ। উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালকের প্রতিনিধি মো: আব্দুল হাই।
কর্মশালায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক সুনামগঞ্জের ডাক পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশক ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ ও সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মাসুম হেলাল, দৈনিক সুনামগঞ্জ খবরের সম্পাদক প্রকাশক পংকজ দে, সাংবাদিক লতিফুর রহমান, খলিলুর রহমান, দেওয়ান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, আমিনু ইসলাম, জসিম উদ্দিন, শহীদনুর আহমেদ, মিজানুর রহমান মিজান, একে মিলন আহমেদ প্রমুখ।
কর্মশালায় সুনামগঞ্জ জেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রায় ৫০ জন সাংবাদিক অংশ গ্রহণ করেন। কর্মশালা শেষে অংশ গ্রহণকারী সাংবাদিকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।