কিশোরগঞ্জে অদম্য নারী পুরস্কার পেলেন বিরল রোগে আক্রান্ত শিক্ষিকা ইতি

২০১৮ সালে তার শরীরের রক্তনালীতে ইনফেকশনজনিত বিরল রোগটি ধরা পড়ে। যা আর কখনো সাড়ার মতো না। প্রতিমাসে তাকে অন্তত অর্ধলাখ টাকা ব্যয় করতে হয় চিকিৎসার পেছনে। তারপরও তিনি থেমে যাননি।

মুহিব্বুল্লাহ বচ্চন, পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ)

Location :

Kishoreganj
‘অদম্য নারী পুরস্কার’ গ্রহণ করছেন শিক্ষিকা মনিরা আজম ইতি
‘অদম্য নারী পুরস্কার’ গ্রহণ করছেন শিক্ষিকা মনিরা আজম ইতি |নয়া দিগন্ত

কিশোরগঞ্জে বিরল রোগে আক্রান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মনিরা আজম ইতি শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী (নারী ক্যাটাগরীতে) উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ পেয়েছেন।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫-এ আয়োজিত পৃথক অনুষ্ঠানে তার হাতে সার্টিফিকেট, ও ক্রেস্ট তুলে দেন কিশোরগঞ্জ জেলা ও পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রশাসন।

মহিলা বিষয়ক অধিদফতর এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তার এ অর্জনে সহপাঠী, সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও তার স্বজনরা উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন।

পুরস্কৃত শিক্ষিকা মনিরা আজম ইতি জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের চরটেকী গ্রামের মরহুম হাসমত আলী এবং জাহিমা খাতুনের মেয়ে। তিনি পাকুন্দিয়া পৌরসদরের সৈয়দ্গাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি দুরারোগ্য একটি বিরল রোগে ভুগছেন।

জানা যায়, অদম্য শিক্ষক মনিরা আজম ইতি সরকারী গুরুদয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স শেষ করেন। চার ভাই-বোনের সংসারে বাবা মারা যাওয়ার পর টিউশনি করে পড়ালেখা করেছেন তিনি। স্নাতক ২য় বর্ষে থাকা অবস্থায় তার বিয়ে হয়।

২০১৮ সালে তার শরীরের রক্তনালীতে ইনফেকশনজনিত বিরল রোগটি ধরা পড়ে। যা আর কখনো সাড়ার মতো না। প্রতিমাসে তাকে অন্তত অর্ধলাখ টাকা ব্যয় করতে হয় চিকিৎসার পেছনে। তারপরও তিনি থেমে যাননি।

নিজের একনিষ্ঠ চেষ্টায় ২০২০ সালে তিনি মেধাতালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি নেন। ইতোমধ্যে তিনি ২০২৫ সালে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক ও গুণী শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্ত-পিটিআই সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কবিতা আবৃত্তিতে ঢাকা বিভাগে প্রথম ও জাতীয় পর্য়ায়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন।

অদম্য এই শিক্ষক সম্মাননা স্বীকৃতি পাওয়ার পর তার নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি একটি আবেকঘন পোস্ট দেন। যেখানে তিনি লেখেন— অদম্য পথচলার এক অনুপম স্বীকৃতি।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫-এ ‘অদম্য নারী পুরস্কার’ (শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী) ক্যাটাগরীতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ অদম্য নারী পুরস্কার প্রাপ্ত হওয়া আমার জীবনের অবর্ণনীয় এক অনুভূতি.......

এ ব্যাপারে পাকুন্দিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দৌলত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘মনিরা আজম ইতি প্রতিকূলতায় থেকেও ২০২০ সালের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উপজেলায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রমেও নৈপূণ্যতা রয়েছে তার। বিভিন্ন প্রকার উপকরণ সামগ্রী তৈরি করে বিদ্যালয়ের পাঠদানকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন তিনি।’

পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুপম দাস বলেন, ‘একটা বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েও তিনি থেমে যাননি। এ রোগের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই জেনেও তিনি হাল ছাড়েননি। ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সফল নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার এ অর্জন দেশের সকল মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’