চৌগাছায় বস্তাপ্রতি আলুতে হাজার টাকা লস, দিশেহারা চাষিরা

কেজিপ্রতি ২৫ টাকা খরচ করে ১২ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হওয়ায় বস্তাপ্রতি তাদের বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)

Location :

Jashore
আলু বাছাই কাজে ব্যস্ত চাষিরা
আলু বাছাই কাজে ব্যস্ত চাষিরা |নয়া দিগন্ত

যশোরের চৌগাছায় আলুতে বস্তাপ্রতি প্রায় ১ হাজার টাকা লোকসান হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কোল্ডস্টোরে রাখা আলুরও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে আলুর দাম। কেজিপ্রতি ২৫ টাকা খরচ করে ১২ থেকে ১৩ টাকায় বিক্রি হওয়ায় বস্তাপ্রতি তাদের বড় অঙ্কের টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

কৃষকেরা বলছেন, সার, কীটনাশক ও দিনমজুরের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আলুর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। বেড়েছে কোল্ডস্টোর ও বহন ভাড়া। ফলে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আলু বিক্রি করে লাভের পরিবর্তে লোকসান গুণতে হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর আলুতে ভালো লাভ হওয়ায় এবার ব্যবসায়ী ও কৃষক পর্যায়ে আলু মজুত বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদন চাহিদার থেকে বেশি হওয়ায় স্টোরে মজুত বাড়ার সাথে দামও কমেছে বেশ।

আজমতপুর গ্রামের আলু চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গেল মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। তাতে বিঘাপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলুর ফলনও বেশ ভালো ছিল, তাই লাভের আশায় সব আলু চৌগাছা ডিভাইন কোল্ডস্টোরে রেখেছিলাম। এখন সেই আলু বিক্রি করে স্টোর ভাড়া, বাছাই ও বহন খরচও উঠছে না। স্টোরে রাখা আলুতে বস্তা প্রতি প্রায় ১ হাজার টাকার লোকসান গুণতে হচ্ছে।’

একই এলাকার শহর আলী বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু উৎপাদিত হয়েছে ৩ হাজার কেজি। কোনো খরচ বাদেই প্রতি কেজি আলু সেই সময় মাঠ থেকে ব্যবসায়ীরা ২০ টাকা দরে কিনতে জোরা জরি করেছিলেন। আমি দেইনি। দুই পয়সা লাভের আশাই সব আলু স্টোরে রেখেছিলাম। সেই আলুতে বিঘাপ্রতি প্রায় ১ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।’

আশাদুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। বিক্রি না করে স্টোরে রেখেছিলাম সেই হিসাবে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে না পারলে পথে বসতে হবে। অথচ গত বছর এ সময়ে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। বর্তমানে কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ যেখানে ২২ থেকে ২৫ টাকা সেখানে ১২-১৩ টাকায় সেই পণ্য বিক্রি হওয়ায় হতাশ কৃষকরা।’

আলু ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন মল্লিক বলেন, ‘এ বছর স্টোরে যারা আলু মজুত করেছিল তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী ভাড়া দিতে না পেরে স্টোর থেকে আলু বের করছেন না। এ বছর এক লাখ আলুতে প্রায় ১০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।’

চৌগাছা বাজারের আলু ব্যবসায়ী আনিচুর রহমান বলেন, ‘আলু কম দরের কারণে সংরক্ষিত আলু বাজারজাত করা সম্ভব না হলে বিপুল আলু অবিক্রীত থেকে যাবে এবং আলু ফেলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। ইতোমধ্যে অনেক আলু স্টোরেই পচন ধরেছে। যারা অধিক লাভের আশায় হাজার হাজার বস্তা আলু স্টোরে রেখে ছিল তাদের বিপদের শেষ নেই। এ বছর অনেক ব্যবসায়ী তাদের মূল পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।’

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ উপজেলায় ২ হাজার ১৬৮ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়। চৌগাছার ডিভাইন কোল্ডস্টোরে এ বছর ১ লাখ ৬ হাজার বস্তা ও ডিভাইন এগ্রোটিস্যুকালচারে ৭৫ হাজার বস্তা আলু স্টোরে রাখা হয়। এরমধ্যে থেকে ৭৫ হাজার বস্তা আলু মালিকরা বের করেছেন। এদিকে রংপুর ও ঠাকুরগা এলাকা থেকে ভোজ্য আলু ঢুকছে বাজারে। ফলে এলাকার ব্যবসায়ী ও কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, ‘গত বছর আলুর চাহিদা বেশি ছিল। সেই তুলনায় জোগান ছিল কম। তাই ভালো দাম পেয়েছে কৃষক। গতবারের দেখাদেখি এবারো আবাদ বাড়িয়ে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। মজুত বেশি তাই দামটা একটু কম। ফলে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন।’