পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার নদী ও খালবিলে নিষিদ্ধ জাল পেতে মাছ ধরার যেন মহোৎসব চলছে। এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী।
জানা গেছে, উপজেলার নলদোয়ানী খাল, বুদাই খাল, তক্তাখালী খাল, ভাড়ানী খাল, গোদার খাল, মোল্লাখালী খাল, বাদ্দার খাল, কচ্ছপিয়ার খাল, গাবতলির খাল, দাসপারা খাল, কদমতলার খাল, পিছাখালির খাল, জামলার খাল, কোহারজোর খালসহ অন্তত ২৫টি খাল ও বিল-নালায় নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, ম্যাজিক জাল, সুতিজাল, বেহুন্দি, ভেসাল এবং চায়না দুয়ারী জালের অবাধ ব্যবহারে দেশীয় মাছগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
লেবুখালী ইউনিয়ন মৎস্যজীবী দলের সভাপতি মো: জসীম উদ্দিন প্রতিবেদককে বলেন, পায়রা নদী থেকে লেবুখালী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ভাড়ানী খালটিতে অবৈধ বেহুন্দি জাল ফেলে অবাধে মাছ শিকার করে চলছে। মৎস্য অফিসকে জানালেও কোনোরকম ব্যবস্থা না নেয়ায় হতাশ এলাকাবাসী।
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে দেশীয় মাছের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ জালের অবাধ ব্যবহার। বর্ষা শুরু হতেই এসব জালের মাধ্যমে ডিম ছাড়ার আগেই পোনা মাছ নির্বিচারে ধরা হচ্ছে, ফলে প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র ভয়াবহভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, উপজেলার নতুন বাজার, পীরতলা বাজার, বোর্ড অফিস বাজারসহ বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে এসব নিষিদ্ধ জাল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে প্রশাসনকে উপেক্ষা করে। এতে প্রশাসনের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
একসময়ের পরিচিত দেশীয় মাছ যেমন- শৌল, বোয়াল, গজার, মাগুর, শিং, কই, সরপুঁটি, পাবদা, আইড়, বাইম, খলসে, রিঠা, রঙিন বেতাগা, বাঁশপাতা, রয়না ও কালিবাউস আজ বিলুপ্তপ্রায়। জমি, নদী ও খালে নানান কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছের প্রজনন। এতে হারিয়ে যাচ্ছে দেশী মাছের প্রজাতি।
বর্ষায় পানি বাড়ার সাথে সাথে অসাধু ব্যক্তি ও চক্রগুলো শুধু নিষিদ্ধ জালই নয়, ব্যক্তিগতভাবে দখলের ফলে মাছ, জলজ সাপ, ব্যাঙ, শামুক ও নানা জলজ প্রজাতি ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।
এ বিষয়ে দুমকি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের অভিযান চালামান আছে। সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন, এ অভিযান চলমান থাকবে। এ বিষয়ে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।
জনগণের অভিযোগ, মৎস্য অফিসের লোকজনকে হাতে নিয়ে অবৈধ জাল পেতে মাছ শিকারের উৎসব চলে। মৎস্য অফিসে বারবার জানানোর পর লোক দেখানো দুয়েকটা অভিযান পরিচালনা করলেও অবৈধ জাল উচ্ছেদে তেমন কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।