আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও-১ (সদর) আসনে বর্ণাঢ্য মোটরসাইকেল র্যালি করেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির মনোনীত প্রার্থী দেলাওয়ার হোসেনের সমর্থনে আয়োজিত এ মোটরসাইকেল র্যালিতে হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় ভোটারদের উচ্ছ্বাসিতভাবে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে জামায়াতের এ প্রার্থীকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানাতে দেখা যায়।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলা এ শোডাউনে প্রায় ৭ হাজার মোটরসাইকেলের উপস্থিতিতে পুরো এলাকা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
র্যালি পরবর্তী সমাবেশে প্রার্থী দেলাওয়ার হোসেন ঠাকুরগাঁওকে চাঁদাবাজমুক্ত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত ও কৃষিবান্ধব জেলা হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে আজ সকাল ৯টা থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ের সালন্দর মাদরাসা ঈদগাহ মাঠে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে পৌনে ১০টার দিকে সেখান থেকে দাঁড়িপাল্লা মার্কার সমর্থনে বিশাল মোটরসাইকেল র্যালি শুরু হয়।
র্যালিটি সালন্দর মাদরাসা থেকে শুরু হয়ে নারগুন, দানারহাট, বেগুনবাড়ি ও বড়খোচাবাড়ি হয়ে মেইন রোডে ওঠে। এরপর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ভুল্লী, ১১ মাইল, রুহিয়া ও পাটিয়াডাঙ্গী প্রদক্ষিণ করে। পরে র্যালিটি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসে শেষ হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মোটরসাইকেলের বহরটি সুশৃঙ্খলভাবে সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় নেতাকর্মীদের মুখে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ এবং দাঁড়িপাল্লা মার্কার সমর্থনে দেয়া স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
স্থানীয়দের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের এটিই অন্যতম বৃহত্তম শোডাউন।
র্যালি শেষে পুরনো বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঠাকুরগাঁও-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মু: দেলাওয়ার হোসেন নির্বাচনী ইশতেহারের আদলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি ঠাকুরগাঁও গড়তে চাই যেখানে কোনো চাঁদাবাজের স্থান হবে না। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত সমাজ গড়াই আমাদের লক্ষ্য।’
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি ও কৃষকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘সার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে। কৃষকরা যাতে সরাসরি ও ন্যায্যমূল্যে সার পান সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো হবে।’
বেকার সমস্যা সমাধানে গুরুত্ব দিয়ে দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের হাজারো বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করব। যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করে বেকারত্ব দূরীকরণই হবে আমাদের অগ্রাধিকার।’
সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে কঠোর বার্তা দেন জামায়াত প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও হবে সব ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে নির্ভয়ে তাদের ধর্মকর্ম পালন করতে পারেন এবং নিরাপদে বসবাস করতে পারেন, আমরা সেই পরিবেশ নিশ্চিত করব। কোনো অপশক্তি যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সেই ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী সজাগ থাকবে।’
নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক ঠাকুরগাঁও উপহার দেয়া হবে। তারা যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারেন, সেই সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে।’
এ সময় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা মার্কায় ভোট দিয়ে দেশ ও জাতির খেদমত করার সুযোগ দেয়ার জন্য ঠাকুরগাঁওবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে বিকেল ৩টার দিকে পুরনো বাসস্ট্যান্ডে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে বিশাল এ র্যালির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
দিনব্যাপী এ শোডাউনে জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রধান, সহকারী জেলা সেক্রেটারি ও অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন আহাম্মদ, শহর আমির অধ্যক্ষ মাওলানা শামসুজ্জামান শাহ শামীম, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আমির মাওলানা মিজানুর রহমান, রুহিয়া থানা আমির আব্দুর রশিদ, ভূল্লি থানা আমির আব্দুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।



