ব্রুনাইয়ে নির্মাণস্থলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ভোলা সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের চর জাহাঙ্গালিয়া গ্রামের জামাল হোসেন (৩৫)।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। তারা মা-বাবা, ভাই-বোনেরা কাঁদছেন, আর আহাজারি করছেন। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন ছোট বোন, আর কফিনে ভরে দেশে ফেরার অপেক্ষায় প্রবাসী ভাই জামাল।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে ব্রুনাইয়ের চীনারুপাই শহরের একটি নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন জামাল। সহকর্মী এক প্রবাসী বিকেলে পরিবারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর জানালে শোকের ছায়া নেমে আসে গ্রামে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ১২ বছর আগে সংসারের অভাব ঘোচাতে ব্রুনাইয়ে পাড়ি জমান জামাল। সেখানে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে কয়েকবার দেশে এলেও গত ৬ বছর ছুটি না পেয়ে আর ফিরতে পারেননি। সম্প্রতি এক সহকর্মী ছুটিতে দেশে এলেও জামালের দেশে ফেরার সময় নির্ধারিত ছিল আগামি ৩ আগস্ট। পরিবারের সদস্যদের জন্য বিভিন্ন উপহারও কিনেছিলেন। ভিডিও কলে দেখিয়েছিলেন সেগুলো। এবার দেশে ফিরে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
আহাজারি করে জামালের বোন কুলসুম বেগম বলেন, ‘আমার ভাই ৩ আগস্ট দেশে আসবে বলেছিল। আমাদের জন্য অনেক কিছু কিনেছে। এবার দেশে ফিরে বিয়ে করবে বলেছিল। কিন্তু এখন ভাইয়ের কফিন আসবে!’
মা নিরুতাজ বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ছেলে দেশে আসার জন্য অনেক দিন ধরে আকুল ছিল। ছুটি না পেয়ে আসতে পারেনি। এখন আর কোনো দিন আসবে না। শুধু লাশ হয়ে ফিরবে।’
নিহতের ভগ্নিপতি সেকান্তর মিয়া জানান, জামালের লাশ স্থানীয় হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে হিমাগারে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র শেষ হলে লাশ পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে তারা বাংলাদেশ সরকারের সহায়তা কামনা করছেন যেন দ্রুত লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
প্রতিবেশীরা জানান, জামাল ছিলেন অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী একজন মানুষ। তার এমন মৃত্যুতে গোটা গ্রাম শোকে স্তব্ধ। সবাই তাকে খুব ভালোবাসত।
এদিকে, জামালের মৃত্যুর খবরে পুরো চর জাহাঙ্গালিয়া গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারসহ গ্রামের মানুষ অপেক্ষায় আছেন প্রিয় জামালকে শেষবারের মতো একনজর দেখার জন্য।