নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র সংঘর্ষে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৩০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে হাতিয়া থানায় মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী নিহত মোবারক হোসেন শিহাবের চাচা ও নিখোঁজ শামছুদ্দিনের ভাই আবুল বাশার।
নিহত মোবারক হোসেন শিহাব সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। অপরদিকে নিখোঁজ মো. শামছুদ্দিন হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত ছায়দুল হকের ছেলে।
বাদী আবুল বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ভাতিজার ময়নাতদন্ত ও দাফন কাজের জন্য মামলা করতে দেরি হয়েছে। আমরা অর্ধেক এজাহার লিখে লাশ দাফন করেছি। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
নিখোঁজ শামছুদ্দিনের স্ত্রী মাহফুজা বেগম অভিযোগ করে বলেন, মনির মেম্বারসহ কয়েকজন আমার স্বামীকে চরে জমি দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। পরদিন খবর পেয়ে আমার ছেলে শিহাব তার বাবাকে ফিরিয়ে আনতে চরে যায়। সেখানে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি ছেলের লাশ পেলেও স্বামীর কোনো সন্ধান এখনো পাইনি। সম্ভবত ডাকাতরা আমার স্বামীকে হত্যা করে জাগলার চরের কোনো নির্জন স্থানে মাটিচাপা দিয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় গোলাগুলিতে পাঁচজন নিহত এবং অন্তত ৮-১০ জন আহত হন।
নিহতরা হলেন হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের শামছুদ্দিনের ছেলে মোবারক হোসেন শিহাব, সুখচর ইউনিয়নের চর আমান উল্যাহ গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিন, হাতিয়া পৌরসভার পশ্চিম লক্ষ্মীদিয়ার মৃত শাহী আলমের ছেলে হক সাব, মো. কামাল উদ্দিন, সুবর্ণচর উপজেলার চরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চর মজিদ এলাকার জয়নাল আবেদীনের ছেলে আবুল কাশেম।
স্থানীয়দের দাবি, জাগলার চরের জমি এখনো সরকারিভাবে কাউকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়নি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গত ৫ আগস্টের পর জাহাজমারা ইউনিয়নের সামছু বাহিনী প্রতি দাগ ২০ হাজার ৫০০ টাকায় জমি বিক্রি শুরু করেন। পরে সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী ওই জমির দখল নিতে মরিয়া হয়ে আরো বেশি দামে জমি বিক্রি শুরু করলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এর জেরেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হাতিয়া থানার ওসি সাইফুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতার ও নিখোঁজদের উদ্ধারে পুলিশের অভিযান চলছে।



