খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছেন পিকেটাররা। বিভিন্ন স্থানে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ যানবাহন ভাংচুর, মসজিদে হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শহরের নারানখাইয়া এলাকায় অবরোধকারী পাহাড়িদের সাথে স্থানীয় বাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এসময় উপজেলা মসজিদেও হামলা চালায় অবরোধকারীরা। পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে সদর উপজেলা ও পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রসাশন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, ‘পৌরসভা ও সদর উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আজ দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত খাগড়াছড়ি পৌরসভা ও সদর উপজেলায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ মোতাবেক ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’
এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আইরিন আকতার জানান, উপজেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং জনগণের জান ও মালের ক্ষতিসাধনের আশঙ্কা রয়েছে। তাই আজ দুপুর ৩টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত উপজেলায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ মোতাবেক ১৪৪ ধারা জারি থাকবে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টায়) শহরের মহাজন পাড়া এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করছে সেনা ও পুলিশ। শহরের পরিস্থিতি থমথমে।
এদিকে, সকাল থেকে শুরু হওয়া অবরোধের ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ ছুটির দিনে খাগড়াছড়ি ও সাজেক বেড়াতে আসা হাজারো পর্যটক।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা নৈশ কোচগুলো জেলার প্রবেশমুখে আটকে পড়েছে। অবরোধকারীরা খাগড়াছড়ি-ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ছাড়াও জেলার পানছড়ি, দীঘিনালা, মহালছড়িসহ অভ্যন্তরীণ সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করেছেন।
পানছড়িতে লাশ রেখে চট্টগ্রাম ফেরার পথে আলুটিলা পুনর্বাসন এলাকায় অবরোধকারীরার সৌদিয়া নামের একটি অ্যাম্বুলেন্সে (চট্ট মেট্রো ছ ৭১-০৬৪৫) ভাংচুর চালায় বলে জানিয়েছেন এর চালক মো: রাসেল হোসেন। এসময় হামলাকারীরা অ্যাম্বুল্যান্সটি জ্বালিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করে বলে জানান তিনি।
খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
হঠাৎ অবরোধের কারণে সাজেক ভ্যালিতে ও খগড়াছড়িতে আটকে আছেন কয়েক হাজার পর্যটক। খাগড়াছড়ি-সাজেক পরিবহন কাউন্টারের লাইনম্যান মো: আরিফ জানান, শুক্রবার আনুমানিক দুই শতাধিক গাড়ি সাজেকের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। যাতে আনুমানিক তিন হাজারেরও বেশি পর্যটক রয়েছেন।
সকালে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকরা জানান, সাজেক যাওয়ার জন্য খাগড়াছড়ি এসে অবরোধের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন তারা। অনেকের সাথে পরিবার পরিজনসহ ছোট ছেলে-মেয়ে রয়েছে। সাজেকের গাড়ি না ছাড়ায় চড়ম ভোগান্তি নিয়ে হোটেলে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রীকে চেতনানাশক দিয়ে একদল দৃর্বৃত্ত সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠে। ঘটনার পরদিন ভিকটিমের বাবা সদর থানায় তিন জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। সেদিনই সেনাবাহিনীর সহায়তায় তিন অভিযুক্তের মধ্যে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানানো হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষণকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে তখন থেকে আন্দোলন করে আসছে জুম্ম ছাত্র-জনতা নামে একটি ছাত্র সংগঠন। এর আগে বৃহস্পতিবার জেলায় অর্ধদিবস অবরোধ পালন করে তারা। শুক্রবার একই দাবিতে মহাসমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা আবারো জেলায় শনিবার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ঘোষণা দেয়।
এর আগে (শুক্রবার) সামবেল চলাকালে কোন কারণ ছাড়াই সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠি-সোঁটা নিয়ে তেড়ে যায় সমাবেশে আসা উচ্ছৃঙ্খল একদল পাহাড়ি যুবক। চট্টগ্রাম থেকে সরকারি কাজ শেষে খাগড়াছড়ি ফেরার পথে এ ঘটনার শিকার হয় গাড়িটি। এসময় গাড়ির চালক আহত হয় এবং গাড়ির সামনের গ্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনা অত্যন্ত শান্তভাবে মোকাবেলা করতে দেখা যায় গাড়িতে থাকা সেনা সদস্যদের। গাড়িটি আক্রমণের মুখে পেছনে যেতে বাধ্য হয়। এসময় সড়কের পাশে থাকা মোটরসাইকেলের গ্যারেজে, দোকানপাট ও সড়কে চলাচলকারী টমটমেও হামলা চালায় সমাবেশকারীরা।
এ ঘটনার পর জেলা বিএনপি, জামায়াত, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিসিপি), পার্বত্য সম-অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেয়।