জামায়াতের সাথে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি বলেছেন, ‘তারা তাদের দলীয় স্ট্যান্ডে কথা বলছে, আমরা আমাদের দলীয় স্ট্যান্ডে কথা বলছি। সুতরাং বিএনপিরসহ সকল দলের সাথে আমাদের ভালো সুসম্পর্ক রয়েছে।’
শুক্রবার (২০ জুন) কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ হল রুমে জামায়াত আয়োজিত নির্বাচনী দায়িত্বশীল সমাবেশে শেষে সাংবাদিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সকল দলের সাথে বসে জয়েন করতে পারতেন। এখানে আমাদের আপত্তি ছিল এবং সেটাকে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে স্টেটমেন্ট দিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছি এবং দ্বিতীয় ধাপের যে আলোচনার কথা ছিল সেটা আমরা বয়কট করেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা টেলিফোনে আমিরে জামায়াতের সাথে কথা বলেছেন। তিনি আমিরে জামায়াতকে আশ্বস্থ করেছেন যে, আমরা বা আমি কোনোভাবে কোনো দলের প্রতি অনুরাগী নেই, আমি পরিপূর্ণ একজন নিরপেক্ষ মানুষ, আপনারাও আমাদের পছন্দের মানুষ, আমাকে সময় দিন, আমি প্রমাণ করব যে আমি নিরপেক্ষ এবং একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার আমি সেটাই করব। আপনারা আমাকে একটু সুযোগ দেন।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকের বিষয়ে ডা. তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়েছে। সেখানে জামায়াত কিছু কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে, আবার কিছু কিছু বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে। সেগুলোকেও বুঝিয়ে যাতে ঐকমত্য করা যায় সে প্রচেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বর্তমান সময়ে যে নিয়ম রয়েছে তা হচ্ছে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে এটা নির্বাচিত হবে। আমরা বলেছি, শুধু পার্লামেন্ট সদস্যদের মাধ্যমে নির্বাচিত হলে যারা মেজরিটি হয়ে সরকার গঠন করবে প্রেসিডেন্টরা তাদেরই হয়ে কাজ করবে কারণ তাদের ভোট বেশি। এ জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে সিস্টেম সেটাকে আমরা আরো বাড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি। যেমন সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ সদস্য, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে একটা ইলেক্টোরাল সিস্টেমের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবে। তাতে যে সুবিধা হবে, একজন উপযুক্ত, জাতীয়ভাবে সম্মানিত, দলকানা নয় এমন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী এই নীতিতে বিশ্বাস করে। আরেকটি বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি, যে কোনো প্রধানমন্ত্রী জীবনের দু’বারের বেশি একাধারে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। এ বিষয়ে বিএনপি ছাড়া বেশিভাগ দল একমত হয়েছেন। কিন্তু এটা এখনো ফাইনাল হয়নি, আগামী রোববার এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়েই আবার আলোচনা শুরুর কথা রয়েছে।’
ডা. তাহের আরো বলেন, ‘আমরা একটি নতুন প্রস্তাব এনেছি; তা হলো সংবিধান সংশোধন, অনাস্থা বিল ও বাজেট। এই তিন প্রস্তাবের বাইরে আর যেকোনো বিষয়ে একই দলের এমপি সে দলের মতের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন। এই ব্যাপারেও আমরা সকলেই একমত হতে পেরেছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠক হয়েছে, আমরা বলেছি যে এই বৈঠকটি অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। কারণ প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ও সকল দলের সাথে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে আমরা চেয়েছিলাম ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। সেই হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। আমরা বলেছি, যদি ফেব্রুয়ারিতে হয় তাহলেও আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ এটা পূর্বের ঘোষিত তারিখের মধ্যেই পড়েছে।’
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলাম প্রথম থেকেই বলে আসছে, আগে স্থানীয় নির্বাচন। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে। এরপরে যে কয়েক মাস থাকবে সে সময়ে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।’