বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়ার সাথে সাথে খাল-বিল, নদ-নদীতে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের আনাগোনা। আর এসব মাছ ধরতে ব্যবহার হয় চাই বা দুয়ারীর অথবা খাদোইন নামে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী।
জানা গেছে, পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা দক্ষিণ বাজারে জমে উঠেছে এসব মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রীর হাট। সপ্তাহে দুই দিন এই বাজারে শত শত মাছ ধরার চাই খুচরা ও পাইকারি দরে বেচাকেনা করা হচ্ছে।
কাউখালীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার চাই ও দুয়ারী তৈরির সাথে জড়িত। বছরের ছয় মাস তারা এ মাছ ধরার যন্ত্র তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। বিভিন্ন জাতের বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় এসব জিনিসপত্র। একটি বাঁশ দিয়ে সাত থেকে আটটি চাই তৈরি করা হয়। তবে একজন কারিগর একদিনে পাঁচ থেকে ছয়টির বেশি চাই তৈরি করতে পারে না।
প্রতি সোমবার ও শুক্রবার কাউখালী সদরের দক্ষিণ বাজারে এ মাছ ধরার যন্ত্র চাই বিক্রি হয়। প্রকারভেদে বাজারে এক কুড়ি চাই দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে টাকা থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া একটি চাই ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এসব চাই তৈরির জন্য একটি বাঁশ কিনতে লাগে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। চাইয়ে ছোট মাছসহ বেশিরভাগ চিংড়ি মাছ আটকা পড়ে।
চাই তৈরির কারিগর আব্দুর রশিদ জানান, তার পরিবারের সবাই মিলে বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস চাই তৈরির কাজ করেন। বাঁশ কেনা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ চাই তৈরি করতে যে কষ্ট আর খরচ হয় সে তুলনায় লাভ বেশি হয় না।
তিনি বলেন, এই শিল্প এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে। দিন দিন খাল-বিল নদীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় মাছ শিকারির সংখ্যাও কমে গেছে। যার কারণে চাইয়ের চাহিদাও কমে গেছে। বর্তমান সব জিনিসের দাম বেশি সে তুলনায় চাইয়ের দাম ভাল পাচ্ছেন না। সরকার এ শিল্প বাঁচাতে ঋণ দিলে তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে পারতেন।
এ ব্যাপারে কাউখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, ‘মে মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত প্রতিটি মাছের পেটেই ডিম থাকে। এই মা মাছ না ধরার জন্য জেলেদের বিভিন্ন প্রকার সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করাসহ জেলেদের বিভিন্ন সময় সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘মাছ শিকারে জেলেরা বিভিন্ন ধরনের অবৈধ যন্ত্র বা জাল ব্যবহার করেন। এগুলো দমনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাঝে মধ্যেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করাও হচ্ছে। অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে দেশীয় মাছ বিলুপ্তির পথে।’
কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল মোল্লা বলেন, ‘আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। অবৈধ জালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন প্রকার অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে দেশীয় মাছ ধ্বংসের পথে। তাই আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে।’