সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রখ্যাত অণুজীব বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আলিমুল ইসলাম বলেছেন, স্বৈরশাসকের সময় দেশপ্রেমিক গণমাধ্যমের ওপর জুলুমের খড়গ নেমে এসেছিলো এবং এ সময় আমার দেশ, দিনকাল, দিগন্ত টিভিসহ অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি ফ্যাসিবাদের চরম নিপীড়ন ও অবহেলার মাঝেও দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দৈনিক সংগ্রাম কঠিনভাবে লড়াই করে টিকেছিলো।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবের আমিনুর রশিদ চৌধুরী মিলনায়তনে সিলেটের ১১ জন সাংবাদিককে ‘ইউনেস্কো ক্লাব সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান উপলক্ষে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ইউনেস্কো ক্লাব এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দা মিনুফার নাসরিনের সভাপতিত্বে ও সংগঠনের মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিকৃবি ভিসি আরো বলেন, এখন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেকটা আছে কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার অভাব রয়েছে। সাংবাদিকতায় বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর ব্যতয় ঘটলে সাংবাদিকতা সারশূন্য হয়ে পড়ে। আমি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে যখন নানাভাবে বদলে দেয়ার চেষ্টা করছি তখন আমাকে ফ্যাসিস্টপ্রেমী হিসেবে আখ্যায়িত করে গণমাধ্যমে লেখা হয়েছে। আমি এতে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।
ফ্যাসিবাদের আমলে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এর প্রতিষ্ঠাতা উন্নয়নের রূপকার সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীর নাম মুছে ফেলা হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সেগুলো পুনঃস্থাপন করেছি। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের শত কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। আমরা এখন উন্নয়ন কাজ শুরু করেছি কিন্তু কোনো বাজেট পাচ্ছি না। এটা দুঃখজনক।
অনুষ্ঠানে পুরস্কারে ভূষিত সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আবদুল কাদের তাপাদার, বাংলা টিভির সিলেট ব্যুরো প্রধান ও সিলেট প্রেসক্লাবের প্রবীণ সদস্য আবদুল মালিক জাকা, সিলেট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও আমার দেশের সিলেট ব্যুরো চিফ খালেদ আহমদ।
অন্য ৮ জন পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন, সিলেটের প্রবাদপ্রতীম সাংবাদিক সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবদুল মালিক চৌধুরী (দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক ব্যুরো চিফ), সিলেটের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক ও গবেষক আবদুল হামিদ মানিক, সিলেট সংলাপ সম্পাদক, জেনারেল ওসমানী ও প্রবাসী গবেষক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও সিলেট বেতারের মহানগর সংবাদদাতা মুহাম্মদ আমজাদ হোসাইন, কিংবদন্তি ফটো সাংবাদিক আতাউর রহমান আতা ও দেশ টিভির সিলেট প্রতিনিধি খালেদ আহমদ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সময় টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি ইকরামুল কবির, সাধারণ সম্পাদক ও সিলেটের ডাকে চিফ রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম।
পুরস্কারে ভূষিত সাংবাদিকগণ তাদের বক্তব্যে সিলেটের দেড় শতাধিক বছরের সাংবাদিকতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরেন। তারা বলেন, ১৮৭৪ সালে সিলেটে প্রথম সংবাদপত্র ‘শ্রীহট্ট প্রকাশ’ বের হয়। সেই হিসেবে এই জনপদে দেড় শতাধিক বছরের গৌরবোজ্জ্বল সাংবাদিকতার সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে যুগভেরী, সিলেট কণ্ঠ, জালালাবাদী, সমাচার আধুনিক সাংবাদিকতা বিকাশে অনন্য অবদান রাখে। ১৯৮৬-৮৭ সালে সিলেটের কোনো কোনো দৈনিকের সার্কুলেশন ছিল ২০/২৫ হাজার। তখন ঢাকার অনেক শীর্ষ স্থানীয় দৈনিকের এমন প্রচার সংখ্যা ছিল না। সিলেটে আধুনিক সাংবাদিকতার এই ধারা এখন আরো অধিক বিকশিত হয়েছে। বিগত ৪০ বছর ধরে সিলেটের ডাক ও দৈনিক জালালাবাদসহ সিলেটের অনেক দৈনিক পত্রিকা পাঠক সমাজে জনপ্রিয় হয়ে আছে।
তারা বলেন, সিলেট সংবাদপত্রের তৃতীয় বাজার। ঢাকা, চট্টগ্রামের পরই সিলেটে প্রতিদিন লাখখানেক দৈনিক পত্রিকা বিক্রি হয়।
বিশেষ অতিথি সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেটের সাংবাদিকদের নীতি নৈতিকতার প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা সবাই আইকনিক সাংবাদিক। তারা সিলেটের সাংবাদিকতাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
তারা বলেন, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় অপ-সাংবাদিকতা ছড়িয়ে পড়ছে। নানারকম বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ গণমাধ্যমের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। এই সঙ্কট ও সমস্যা মোকাবেলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে। শেষে প্রধান অতিথি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন