এ টি এম আজহারুল ইসলাম

আমরা ২৪ এর পূর্বে ফিরে যেতে চাই না

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে।’

হারুন আনসারী, ফরিদপুর

Location :

Faridpur
ফরিদপুরে এ টি এম আজহারুল ইসলাম
ফরিদপুরে এ টি এম আজহারুল ইসলাম |নয়া দিগন্ত

‘জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে’ উল্লেখ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই দু’টি নির্বাচনের এতবড় আয়োজন একই দিনে করার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের দেশের সরকারের নেই। একইদিনে যদি দুটি ভোটের আয়োজন করা হয়, তাহলে জনগণ ঠিকমতো ভোট নাও দিতে পারে। এতে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। আমরা ২৪ এর পূর্বে ফিরে যেতে চাই না। আমরা এই অবস্থার একটা আইনি ভিত্তি দিতে চাই।’

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের অম্বিকা ময়দানে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ফরিদপুর জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত এ গণসমাবেশে সমমনা ৮ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে জামায়াতের নায়েবে আমির আজহারুল ইসলাম সকালে ফরিদপুর পৌছে সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার কবর জেয়ারত করেন।

এসময় আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী অন্য ইসলামিক দল ও শরিক দল নিয়ে আমরা আন্দোলন করছি একটি সুষ্ঠ, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য, সমস্ত ভোটার উপস্থিতির মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু একটি সুষ্ঠ নির্বাচন করার জন্য। সেই নির্বাচন করতে হলে ২৪ এর গণবিপ্লবের মাধ্যমে যে জুলাই সনদে আমরা সবাই স্বাক্ষর করেছি, সেই সনদকে একটি আইনি ভিত্তি দেয়ার জন্য আমরা সবাই একমত হয়েছি। শুধু সেই গণভোট একদিনে হবে, নাকি আলাদা আলাদা দিনে হবে সেটি নিয়ে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন কোনো ক্ষমতা বদলের নির্বাচন নয়। এবারের নির্বাচন আদর্শিক পরিবর্তনের নির্বাচন। এবারের নির্বাচন সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচন। এ নির্বাচন আধিপত্যবাদী শক্তির হাত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর নির্বাচন। এজন্য এ নির্বাচনে আমাদের জনগণকে এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে।’

জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘যেখানেই যাই, দেখি গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই গণজোয়ার দেখে অনেকে আবোলতাবোল বলা শুরু করে দিয়েছে। অনেক জায়গায় হামলা করা শুরু হয়েছে। হামলা করে জামায়াতে ইসলামকে স্তব্ধ করতে পারবেন না। আপনারা যারা যুবক আছেন, প্রত্যেকটা ভোটকেন্দ্রে পাহারা দিবেন। আপনারা পাহারা দিবেন ভোর চুরি করার জন্য নয়, ভোট ডাকাতি করার জন্য নয়। যারা ভোট দিতে বাধা দিবেন, যারা ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে আসবে, তারাও দু’হাত নিয়ে আসবে, আপনারও দু’হাত আছে; তারা যেন দুই হাত ফেরত নিয়ে না যেতে পারে। আমরা কারো ভোটাধিকার নষ্ট হতে দেবো না ইনশাআল্লাহ ‘

আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জীবন বাজি রেখে এতদিন চলে আসছি। জামায়াতে ইসলামী অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। যারা একদিন বলেছে, ফুৎকারে জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে, তারা আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কথায় কথায় শুনতাম অমুকের বেটি দেশ ছেড়ে পালায় না। এখন সেই বেটিও কিন্তু দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর লোকেরা জনগণকে ফেলে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নাই। ফাঁসির কাষ্ঠে হাসিমুখে মৃত্যু বরণ করে শহীদ হয়েছে। ১৮ কোটি মানুষকে ফেলে নিরাপদ আশ্রয় সুন্দর জীবন যাপন করার লোক জামায়াতে ইসলামীর নেতারা ছিল না।

আমাদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। ১০ জন নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা এই বাংলাদেশকে সোনার বাংলা দেখতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে স্বাধীন বাংলাদেশকে দেখতে। আমরা বাংলাদেশকে জনগণের ঈমান আকিদা চেতনার বাংলাদেশ দেখতে চাই। এই লক্ষ্যে এবারের নির্বাচনে আপনারা দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিবেন।

এ সময় তিনি ফরিদপুর ৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আবদুত তাওয়াব কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, এই ফরিদপুর শহরে আপনারা যদি মুজাহিদ সাহেবকে ভালোবাসেন তাহলে মুজাহিদ সাহেবের প্রার্থী হিসেবে আপনারা কি তাওয়াব সাহেবের জন্য কাজ করতে রাজি আছেন?

একইসাথে তিনি ফরিদপুর-১ আসনে অধ্যাপক ডা: ইলিয়াস মোল্লা, ফরিদপুর-২ আসনে মাওলানা সোহরাব হোসাইন ও ফরিদপুর-৪ আসনে মাওলানা সরোয়ার হোসাইনকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

ফরিদপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ বদরুদ্দীনের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও অঞ্চল সহকারী মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, অঞ্চল টিম সদস্য শামসুল ইসলাম আল্ বরাটী। অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ফরিদপুর জেলা শাখা সভাপতি মাওলানা আমজাদ হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবু নাসির, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামাল, খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা মো: মিজানুর রহমান আমির, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবু হারিস মোল্লা, শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে হাসান জামিল, শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মো: ওবায়দুল্লাহ, শহর শাখার সভাপতি আকমল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ইমতিয়াজ উদ্দিন আহমেদ।