মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে বাড়ি থেকে গ্রাম্য পুলিশ দিয়ে এক যুবককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ইউপি মেম্বারের বাড়িতে। দুই দিন-দুই রাতের মাথায় মেম্বার তুলে নিয়ে যান তার বাবা-মাকে। বাধ্য করে স্ট্যাম্পে সই নিয়ে তাদের হাতে তুলে দেন আধমরা ছেলেকে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথেই মারা যান সেই যুবক।
পরিবারের অভিযোগ, বেদম মারপিট করে নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।
ঘটনাটি রংপুরের মিঠাপুকুরে উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের পূর্ব বড়বালা গ্রামের। মৃত যুবকের নাম সোহেল মিয়া (২৭)। তিনি ওই গ্রামের পূর্ব আজাদুল হক ওরফে কেতার ছেলে। এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে সোহেলের।
প্রাথমিক তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে মিঠাপুকুর থানার ওসি নুরে আলম জানান, সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের গ্রাম্য পুলিশ মোনারুল ইসলাম নিজ বাড়ি থেকে ইউপি মেম্বারের কথা বলে সোহেল মিয়াকে বাড়ি থেকে ডেকে বালুয়া বাজারে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পাশের মিলনপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আশরাফুল মেম্বারের বাড়িতে পৌঁছে দেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আশরাফুল মেম্বার তার ভাতিজি জামাতার মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় সোহেলকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। সোহেল নিজেকে নির্দোষ দাবি করলে ওই বাড়িতেই দুই দিন আটক রেখে আশরাফুল মেম্বারসহ বেশ কয়েক ব্যক্তি সোহেলকে বেদম মারপিট করেন।
তদন্তের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি আরো জানান, মারপিটের এক পর্যায়ে সোহেল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বুধবার (২৯ অক্টোবর) গভীর রাতে স্থানীয় হাবিবুর রহমান নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তার মা-বাবাকে ডেকে নিয়ে প্রথমে সাদা স্ট্যাম্পে সই করে নেন। পরে সোহেলকে অসুস্থ অবস্থায় তাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখান থেকে সোহেলকে বাড়িতে নিয়ে এলে সোহেল আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান।
এরপর বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী ওই মেম্বার নানাভাবে পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করে লাশ দাফন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। পরে বিষয়টি পরিবারের পক্ষ থেকে মিঠাপুকুর থানায় জানানো হয় বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরের পর। পুলিশ সোহেলের বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে সন্ধ্যায়।
ওসি জানান, এ ঘটনায় আশরাফুল মেম্বারসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাদের নামে হত্যা মামলা করেছেন সোহেলের বাবা আজাদুল হক ওরফে কেতা। ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই অভিযুক্তরা গা-ঢাকা দিয়েছেন। গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
ওসি জানান, প্রকৃত ঘটনা নিশ্চিতে লাশের সুরতহাল প্রস্তুত করা হয়েছে। মৃতের শরীরে অসংখ্যা আঘাতের চিহ্ন আছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
সোহেলের বাবা আজাদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষমতার প্রভাবে আশরাফুল মেম্বার আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে চকিদার দিয়ে নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল চোর সন্দেহে ব্যাপক মারপিট করে দুই দিন ধরে। এতে আমার ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ল আমাকে ওর মা-সহ তুলে নিয়ে গিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়ে আমাদের হাতে ছেলেকে দেয়। বাড়িতে আসার পর হাসপাতালে নেবো এমন সময় সে মারা যায়। আমি আশরাফুল ইসলামসহ যারা আমার ছেলেকে পিটিয়ে মারলো তাদেরও পিটিয়ে মৃত্যু চাই।’



