শ্রীপুরে সানসেটের নিচে চাপা পড়ে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

রইস উদ্দিন বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর

Location :

Sripur
সানসেটের নিচে চাপা পড়ে নির্মাণশ্রমিক রইস উদ্দিনের মৃত্যু
সানসেটের নিচে চাপা পড়ে নির্মাণশ্রমিক রইস উদ্দিনের মৃত্যু |নয়া দিগন্ত

গাজীপুরের শ্রীপুরে নির্মাণাধীন বসত-বাড়ির সানসেটের নিচে চাপা পড়ে রইস উদ্দিন (৩০) নামে এক নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরমী (পশ্চিম পাড়া) গ্রামের ফাইজুদ্দিনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

রইস উদ্দিন বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।

নির্মাণাধীন বসত-বাড়ির মালিক ফাইজুদ্দিন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাতলাশী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শ্রীপুরের বরমী বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন।

মৃতের স্ত্রী রিমি আক্তার জানান বলেন, ‘সকালে কাজে আসার সময় আমার তিন বছর বয়সী মেয়ে রাদিফা তার বাবাকে বলেছিল বাবা আজ কাজে যেও না, আমার সাথে খেলা করো।’

সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তিনি বারবার বিলাপ করছেন। একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয়রা তার মাথায় পানি ঢালেন।

মৃতের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়ির মালিকের অবহেলার কারণে আমার ছেলেটাকে প্রাণ দিতে হলো। সানসেট ঢালাইয়ে পর্যাপ্ত রড ব্যবহার করা হয়নি বলে তিনি শুনেছেন। যার কারণে আজকে আমার ছেলের ওপর সানসেট ভেঙ্গে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যখন সানসেট ভেঙ্গে পড়ে যায় তখন বাড়ির মালিক ও নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ঘটনাস্থলেই ছিলেন। তাৎক্ষনিক তারা ব্যবস্থা না নিয়ে দায় এড়িয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় স্থানীয়রা উত্তেজিত হয়ে নির্মাণাধীন বাড়ির দোতলায় প্রবেশ করে জানালার গ্রিল, স্যানেটারি ফিটিংস ভাংচুর করে। এ সময় বাড়ির নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অজ্ঞাত এক পথচারীর মাথায় জানালার গ্রিল ছিটকে পড়ে রক্তাক্ত জখম হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।’

মৃতের সহকর্মী নির্মাণশ্রমিক মোবারক হোসেন বলেন, ‘দোতলা বাড়িতে প্রবেশ মুখেই সানসেট রড ছাড়া নির্মাণ করা হয়েছে। সকালে কাজ করার সময় হঠাৎ সানসেট ভেঙ্গে রইস উদ্দিনের ওপরে পড়ে। এতে সানসেটের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’

বসত-বাড়ি নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমি ইঞ্জিনিয়ারের দেয়া প্লান মোতাবেক বাড়ির নির্মাণ কাজ করছিলাম। বাড়িতে প্রবেশের মুখে মাথার ওপরে সানসেট নির্মাণের সময় পিলার দেয়ার কথা জানানো হলেও বাড়ির মালিক শুনেননি। উনার অবহেলার কারণে নির্মাণশ্রমিককে জীবন দিতে হয়েছে।’

বাড়ির মালিক ফাইজুদ্দিনের মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এ মুহুর্তে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আছি। বাড়িতে প্রবেশ মুখে সানসেট ভেঙ্গে নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এখানে আমার কোনো হাত বা দোষ নেই।’

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুবর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃতের পরিাবরের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।’