চসিক মেয়র শাহাদাত

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে

‘পতেঙ্গা দেশের ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ। তাই সৈকতকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব সকলের।’

নূরুল মোস্তফা কাজী, চট্টগ্রাম ব্যুরো

Location :

Chattogram
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছেন চসিক মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছেন চসিক মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন |নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের অমূল্য সম্পদ। বারবার সতর্ক করার পরও যারা সৈকত দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন।’

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সৈকত এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার পর মেয়র বলেন, ‘পতেঙ্গা দেশের ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণ। তাই সৈকতকে সুশৃঙ্খল ও সুন্দর রাখার দায়িত্ব সকলের।’

মেয়র আরোও বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের সম্পদ — যেখানে মানুষ একটু সময় কাটাতে আসে। সেখানে কেউ বিচের ওয়াকওয়ে বা জনসাধারণের পথ দখল করে টেবিল-ছাতা রেখে ব্যবসা বসাতে পারবে না। পর্যটকদের জোর করে খাবার খাওয়ানো বা বিল চাপিয়ে দেয়ার অভিযোগও আমরা পেয়েছি। এখানকার ব্যবসা যদি সৈকতকে সংস্কৃতিগত বা ভৌগোলিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘সৈকতের পেছনের অংশে দোকানপাট আছে এবং সেখানে পর্যাপ্ত খাবারের সুযোগ রয়েছে; তাই সৈকত অঞ্চলে হোটেল বা স্থায়ী বসতি গড়ে তুলে জনস্বার্থ বিপন্ন করা গ্রহণযোগ্য নয়।’

মেয়র বলেন, ‘আমি বারবার দোকানদারদের সাথে কথা বলেছি, তারা সম্মতিও জানিয়েছেন যে বিচ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এরপর আমরা সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং পরে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এরপরও যারা সি-বিচ দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। জেলা প্রশাসন, সিডিএ, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সাথে সমন্বয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’

অভিযানের আগে মেয়র জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) যৌথভাবে আয়োজিত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ মোকাবেলায় সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘পতেঙ্গা আমাদের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত উপকূলীয় এলাকাগুলোর একটি। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ এর সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বড় হুমকি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা এমন একটি দায়িত্বশীল সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রতিটি দর্শনার্থী ও নাগরিক নিজেদের সৈকত পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাগরকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব নেবে।’

ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ সরদার এম. আসাদুজ্জামান পতেঙ্গার পরিবেশগত গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পতেঙ্গা শুধু একটি সৈকত নয়, এটি চট্টগ্রামের গর্বের প্রতীক। কিন্তু প্রতিদিন এখানে জমা হওয়া প্লাস্টিক বর্জ্য সামুদ্রিক প্রাণী, জনস্বাস্থ্য ও জীবিকার জন্য হুমকি তৈরি করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আট লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে চট্টগ্রাম শহরে দৈনিক প্রায় তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর একটি বড় অংশ কর্ণফুলী নদী ও বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে, যা জীববৈচিত্র্য এবং উপকূলীয় সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে।

দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকত পরিষ্কার কার্যক্রম পরিচালনা করে, পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিন ও সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করে এবং আগত দর্শনার্থীদের প্লাস্টিক ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি নিতে উদ্বুদ্ধ করে।