প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে কটিয়াদীর ৪৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন, তিনিও সহকারী শিক্ষক। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষকদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

ফখর উদ্দিন ইমরান, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)

Location :

Kishoreganj
প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ৪৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্তরা পালন করছেন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব। শিক্ষক সঙ্কটের ফলে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নে ১১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮টি বিদ্যালয়েই প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ২৯টি বিদ্যালয়ে রয়েছে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক। এছাড়া শূন্য রয়েছে ৪৮ সহকারী শিক্ষকের পদও। এতে এসব বিদ্যালয়ে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম।

প্রধান শিক্ষকবিহীন কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম সামলাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করছেন, তিনিও সহকারী শিক্ষক। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষকদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানতে অনীহা প্রকাশ করছেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতি হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মনির হোসেন, জামাল উদ্দিন ও তারেক রহমান জানান, বিদ্যালয়ে যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন, তিনি মূলত এই বিদ্যালয়েরই একজন সহকারী শিক্ষক। বেশিভাগ সময় তিনি দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারেন না। এছাড়া বিদ্যালয়ে অন্যান্য সহকারী শিক্ষকও তার নির্দেশনা সঠিকভাবে মানছেন না। ফলে তাদের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে।

মুমুরধিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদা আক্তার বলেন, প্রধান শিক্ষক অবসরের যাওয়ায় সিনিয়র সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বাড়তি দায়িত্ব চেপে বসেছে। দায়িত্ব পালনকালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে তারা তেমন কোনো সুবিধা পান না। অফিসের কাজে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ ছয়টি, এর মধ্যে আছেন পাঁচজন, প্রধান শিক্ষক শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

জালালপুর ইউনিয়নের চরপুক্ষিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে চলতি দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়ে ছিলাম, কিন্তু আমরা বেতন পাই ১১তম গ্রেডে। চলতি দায়িত্ব হিসেবে শুধু ১৫ শ’ টাকা সম্মানী পাই। ছয় বছর হয়ে গেল, আজও দশম গ্রেডে বেতন পাইনি।’

কটিয়াদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ইতোমধ্যে ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ পূরণ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পদোন্নতি অথবা সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করবে।

সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য থাকার বিষয়ে বলেন, অধিদফতর আমাদের থেকে শূন্যপদের তালিকা নিয়েছে। সরকার নিয়োগ দিলেই শূন্যপদ পূরণ হবে।